Tuesday 15 March 2022

ইউক্রেন যুদ্ধ … দুই সপ্তাহ ধরে রুশ বিমান বাহিনী নিরুদ্দেশ!

১৫ই মার্চ ২০২২

 

রুশদের অত্যাধুনিক 'সুখোই ৩৪' বোমারু বিমানকে সাধারণ আনগাইডেড বোমা বহণ করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করতে শুরু করেছেন যে, রুশদের ‘প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন’ বা ‘পিজিএম’ বা নিখুঁতভাবে আঘাতে সক্ষম গোলাবারুদএর ঘাটতি রয়েছে। 


ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে অনেকেই মনে করেছিলেন যে, রুশ বিমান বাহিনী খুব দ্রতই ইউক্রেনের আকাশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। কিন্তু যুদ্ধের দুই সপ্তাহেও রুশ বিমান বাহিনীর আনাগোণা বেশ কমই দেখা গেছে বলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসা বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে। রুশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের পত্রিকা ‘ক্রাসনায়া জুয়েজদা’র এক লেখায় রুশ বিমান বাহিনীর উপপ্রধান লেঃ জেনারেল সের্গেই দ্রোনভ বলেন যে, এবছরের মাঝে রুশ বিমান বাহিনী ‘সুখোই ৩৫’, ‘সুখোই ৩০’, ‘সুখোই ৫৭’ এবং ‘সুখোই ৩৪’সহ ৬০টারও বেশি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান পেতে যাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২০এর মাঝে তারা ৪’শ ৪০টা নতুন যুদ্ধবিমান এবং কয়েক হাজার মনুষ্যবিহীন ড্রোন পেয়েছে। কিন্তু দ্রোনভের কথাগুলি ইউক্রেনের আকাশে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়নি; যেখানে রুশ দ্রুতগামী ফাইটার বিমানগুলিকে বেশ কমই উড়তে দেখা গেছে; সেটাও মূলতঃ একটা বা দু’টা বিমান হিসেবে, একেবারে কম উচ্চতায় এবং রাতের বেলায়। যুদ্ধের প্রথম মুহুর্তেই রুশ ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ইউক্রেনের বিমান ঘাঁটি, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার এবং বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে টার্গেট করে ছোঁড়া হয়। ‘দ্যা ইকনমিস্ট’ বলছে যে, মার্কিন ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও কর্মক্ষম রয়েছে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’এর হিসেবে রুশ বিমান বাহিনীতে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার যুদ্ধবিমান; ইউক্রেনের রয়েছে ১’শরও কম। রুশরা ইউক্রেনের সীমানার কাছাকাছি প্রায় ৩’শ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করলেও সেগুলির কতটুকু সফল ব্যবহার হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।

খারকিভ শহরের ৬ই মার্চের এক সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, দু’টা বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বস্তু আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে বড় আকারের বিস্ফোরণ তৈরি করেছে। লন্ডনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক থমাস উইদিংটন এই ভিডিওটা দেখে বলছেন যে, প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটা খুব সম্ভবতঃ টার্গেট মিস করেছে; তবে দ্বিতীয়টা সরাসরি আঘাত করেছে। একই ঘটনার আরেকটা ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, আকাশ থেকে একটা বিমান জ্বলন্ত অবস্থায় ভূপাতিত হচ্ছে। এই ঘটনাটা খুব সম্ভবতঃ মধ্যম পাল্লার রাডার নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের কাজ ছিল; হয়তো ‘বুক’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রক রাডার থেকে বাঁচার জন্যেই রুশ বিমানগুলি খুব সম্ভবতঃ নিচু দিয়ে উড়ছে। তবে এভাবে একটা সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে তারা আরেকটা সমস্যার জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইউক্রেনকে ‘স্টিংগার’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। ইনফ্রারেড নিয়ন্ত্রিত এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কাঁধের উপর থেকে ছোঁড়া যায়, যা নিচু দিয়ে ওড়া বিমানের ইঞ্জিনের তাপকে টার্গেট করে। এই একই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ১৯৮০এর দশকে আফগান মুজাহিদরা ৩’শ সোভিয়েত হেলিকপ্টার এবং ১’শ ফাইটার বিমান ধ্বংস করে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রকাশ করা একটা ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, একটা ‘স্টিংগার’ ক্ষেপণাস্ত্রের দ্বারা একটা ‘এমআই ৩৫’ এটাক হেলিকপ্টার ধ্বংস হচ্ছে।

 

ইউক্রেনের 'স্টিংগার' ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হচ্ছে রুশ 'এমএই ৩৫' এটাক হেলিকপ্টার। নিচু দিয়ে উড়ে রুশ বিমানগুলি হয়তো মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের হাত থেকে বাঁচবে, কিন্তু স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের শিকারে পরিণত হবে; যেগুলি এখন মার্কিনীরা ইউক্রেনিয়ানদের সরবরাহ করছে।


রুশদের ‘পিজিএম’এর সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে কি?

রুশ বিমানগুলির নিচু দিয়ে ওড়ার আরেকটা কারণ থাকতে পারে; তা হলো বিমানগুলির বহণকৃত গোলাবারুদ। সাম্প্রতিক সময়ে রুশ বিমান বাহিনী বেশকিছু ‘প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন’ বা ‘পিজিএম’ বা নিখুঁতভাবে আঘাতে সক্ষম গোলাবারুদ পেলেও এগুলির ব্যবহার এখনও খুব বেশি নয়। ব্রিটিশ থিংকট্যাঙ্ক ‘রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট’ বা ‘রুসি’র বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক এক লেখায় বলছেন যে, সিরিয়াতেও রুশ বিমান বাহিনী ব্যাপক হারে সাধারণ আনগাইডেড বোমা এবং আনগাইডেড রকেট ব্যবহার করেছে। বেশিরভাগ ‘পিজিএম’ ব্যবহার করেছিল রুশ ‘সুখোই ৩৪’ বোমারু বিমানগুলি। কিন্তু সেগুলিও অনেক ক্ষেত্রেই আনগাইডেড গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে। এর মাধ্যমে ধারণা করা যেতে পারে যে, রুশ বিমান বাহিনীর খুব বেশি পাইলট ‘পিজিএম’এর ব্যাপারে জ্ঞান রাখে না। আর হয়তো তাদের ‘পিজিএম’এর সরবরাহ এবং মজুদও খুব একটা বড় নয়। ইউক্রেনের চেরনিহিভ শহরে একটা ‘সুখোই ৩৪’ বোমারু বিমানের ধ্বংসাবশেষের সাথে সাধারণ আনগাইডেড বোমা দেখা যায়। রুশ রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার ছবিগুলিতেও ‘সুখোই ৩৪’ বিমানে আনগাইডেড বোমা শোভা পেয়েছে। চেরনিহিভ এবং খারকিভ শহরেও অবিস্ফোরিত আনগাইডেড বোমা পাওয়া গেছে। তবে রুশদের ‘পিজিএম’ কম ব্যবহার করার আরেকটা সম্ভাব্য কারণ দেখাচ্ছেন মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘সিএনএ’এর বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যান। তিনি বলছেন যে, হয়তো রুশরা সামনের দিনগুলিতে ব্যবহারের জন্যে অথবা আরও বড় কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ‘পিজিএম’ জমিয়ে রাখছে। আনগাইডেড বোমা ব্যবহারের ফলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার বর্ণনা দিচ্ছেন ‘রয়াল এরোনটিক্যাল সোসাইটি’র টিম রবিনসন। তার মতে এখন রুশ পাইলটদের সামনে দু’টা পথ খোলা রয়েছে। প্রথমতঃ নিচু দিয়ে উড়ে স্বল্প পাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের শিকার হওয়া; অথবা দ্বিতীয়তঃ দূর থেকে আনগাইডেড বোমা ছোঁড়া; যাতে টার্গেটে আঘাত করার সম্ভাবনা অনেকটাই কম হবে।

ডাচ প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইট ‘ওরিক্স’এর বিশ্লেষক স্টাইন মিতজার এবং অন্যান্যরা সোশাল মিডিয়া খুঁজে প্রথম দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ১১টা রুশ যুদ্ধবিমান, ১১টা হেলিকপ্টার এবং ২টা ড্রোন ধ্বংসের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। সে সময় পর্যন্ত ইউক্রেনের সরকার দাবি করেছে যে, তারা মোট ৩৯টা যুদ্ধবিমান এবং ৪০টা হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে। ‘কিংস কলেজ লন্ডন’এর রব লী মনে করছেন যে, যুদ্ধের প্রথম দুই সপ্তাহে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস না করতে পারাটা রাশিয়ার জন্যে একটা মস্তবড় ভুল ছিল। এর ফলশ্রুতিতে রুশ বিমানগুলি নির্বিঘ্নে ইউক্রেনের আকাশে টহল দিতে সক্ষম হবে না। রুশ বোমারু বিমানগুলিও সেনাবাহিনীকে সহায়তা দিতে সক্ষম হবে না। সার্ভেইল্যান্স এবং আগাম ওয়ার্নিং দেয়া বিমানগুলিকেও এক্ষেত্রে দূরে অবস্থান করতে হবে; যার ফলশ্রুতিতে ইন্টেলিজেন্স প্রবাহে ঘাটতি পড়বে।

ভূপাতিত একটা রুশ 'সুখোই ৩৪' বোমারু বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখানো হচ্ছে। রুশ বিমান বাহিনীর পাইলটদের ট্রেনিং যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 'পিজিএম' যদি কমও থাকে, তাহলে আকাশ নিয়ন্ত্রণকারী ফাইটার বিমানের তো ওড়ার কথা ছিল। হয়তো রুশ জেনারেলরা রুশ বিমান বাহিনীর এই দুর্বলতাগুলিকে ইউক্রেনের আকাশে দেখাতে চাইছেন না; কারণ এতে করে বাইরের বিশ্বের কাছে রুশদের সক্ষমতার যে ছবিখানা রয়েছে, তার সাথে বাস্তবতার দূরত্ব চোখে পড়বে।


নির্বিচার বোমাবর্ষণ আসছে কি?

কানাডার ‘রয়াল মিলিটারি কলেজ’এর প্রফেসর ওয়াল্টার ডর্ন মার্কিন মিডিয়া ‘সিবিএস’কে বলছেন যে, যদি রুশরা ইউক্রেনের আকাশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতো, তাহলে সেটা ভালোভাবেই বোঝা যেতো। কারণ তখন রুশ সেনাবাহিনী খুব সহজেই বিমানবাহিনীকে তাদের সহায়তায় ডাক দিতে পারতো; এবং তখন বিমান হামলায় ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়তো। ‘রুসি’র জাস্টিন ব্রঙ্ক রুশ বিমান বাহিনীর কম কার্যক্ষমতার কিছু ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। রুশ সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে বিমান বাহিনীর বিমানগুলির সমন্বয় খুবই খারাপ বোঝা যাচ্ছে। কারণ সেনাবাহিনীর গাড়িগুলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাল্লার বাইরে অপারেট করছে। এমনকি রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রাডারগুলি অনেক ক্ষেত্রেই বেকার বসে ছিল; যেসময় ইউক্রেনের তুর্কি নির্মিত ‘বায়রাকতার টিবি২’ ড্রোনগুলি রুশ সেনাবাহিনীর ক্ষতিসাধন করেছে। সিরিয়ার যুদ্ধে রুশরা হয়তো তাদের একটা বড় অংশ ‘পিজিএম’ ব্যবহার করে ফেলেছে। যার ফলশ্রুতিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মোতায়েন করা বেশিরভাগ বিমানই হয়তো সাধারণ আনগাইডেড বোমা দ্বারা সজ্জিত হয়েছে। ‘পিজিএম’ ব্যবহার করার জন্যে ‘টার্গেটিং পড’ বা একধরণের ইলেকট্রনিক ক্যামেরা সজ্জিত টার্গেটিং সিস্টেম দরকার হয়; যেগুলি রুশদের কতগুলি রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এগুলি ছাড়া সাধারণ বোমা দিয়ে ইউক্রেনের শহরাঞ্চলে আক্রমণ করতে গেলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং হত্যাযজ্ঞ হবে নিঃসন্দেহে। সেটা করার আগে রুশ বিমান বাহিনী হয়তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এধরণের বাছবিচার ছাড়া বোমাবর্ষণ রুশরা সিরিয়ার আলেপ্পো এবং হমস শহরে করেছিল। ব্রঙ্ক মনে করছেন যে, ইউক্রেনেও সেরকমই কিছু অপেক্ষা করছে।

তবে ‘পিজিএম’ না থাকলেও আকাশ নিয়ন্ত্রণকারী ফাইটার বিমানগুলি তো অপারেট করার কথা। রুশ বিমান বাহিনীর কাছে বর্তমানে ৮০টার মতো অত্যাধুনিক ‘সুখোই ৩৫এস’ ফাইটার বিমান এবং ১’শ ১০টার মতো ‘সুখোই ৩০এসএম২’ ফাইটার বিমান রয়েছে। ব্রঙ্ক বলছেন যে, এই বিমানগুলির তো ইউক্রেনের আকাশ থেকে ইউক্রেনের বিমান বাহিনীকে মুছে ফেলার কথা। তার ধারণা, হয়তো রুশ বিমান বাহিনীর বিমানগুলি রুশদের নিজস্ব বিমান প্রতিরক্ষার সাথে সমন্বয় করে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথে অপারেট করতে সক্ষম নয়। কারণ এধরণের অপারেশনে পশ্চিমাদের মাঝেও নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে নিজেদের বিমান ভূপাতিত হবার বহু উদাহরণ রয়েছে। এধরণের অপারেশনে দক্ষ হতে গেলে যথেষ্ট ভালো সমন্বয় ছাড়াও চমৎকার যোগাযোগ এবং নিয়মিত ট্রেনিংএর প্রয়োজন। কিন্তু তারপরেও ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর ক্ষুদ্র সম্পদের বিরুদ্ধে এই বিমানগুলিকে ব্যবহার না করাটা সত্যিই আশ্চর্যজনক।

হয়তো রুশ পাইলটরা যথেষ্ট ট্রেনিংএর সুযোগ থেকে বঞ্চিত। খুব একটা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও বিভিন্ন রুশ প্রতিবেদন থেকে ধারণা করা যায় যে, রুশ পাইলটরা গড়ে এক বছরে ১’শ থেকে ১’শ ২০ ঘন্টা ওড়ার সুযোগ পায়। এর মাঝে পরিবহণ বিমানও রয়েছে, যেগুলি সাধারণতঃ ফাইটার বিমানের চেয়ে বেশি সময় ওড়ে। কাজেই রুশ ফাইটার পাইলটরা হয়তো বছরে ১’শ ঘন্টার কমই পায় ওড়ার জন্যে। অপরদিকে মার্কিন এবং ব্রিটিশ ফাইটার পাইলটরা ১’শ ৮০ থেকে ২’শ ৪০ ঘন্টা ওড়ার পরেও, এবং সিমুলেটরে যথেষ্ট সময় কাটাবার পরেও বলছে যে, তাদের দক্ষতা কমে যাচ্ছে। কাজেই গত এক দশকে কয়েক’শ নতুন যুদ্ধবিমান রুশ বিমান বাহিনীতে যুক্ত হলেও তাদের পাইলটদের সেগুলিকে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। এমতাবস্থায় ব্রঙ্ক মনে করছেন যে, রুশ জেনারেলরা হয়তো রুশ বিমান বাহিনীর এই দুর্বলতাগুলিকে ইউক্রেনের আকাশে দেখাতে চাইছেন না; কারণ এতে করে বাইরের বিশ্বের কাছে রুশদের সক্ষমতার যে ছবিখানা রয়েছে, তার সাথে বাস্তবতার দূরত্ব চোখে পড়বে।

রুশ বিমান বাহিনীর সক্ষমতা ভ্লাদিমির পুতিনের সময় যথেষ্টই বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সক্ষমতাকে যাচাই করার একটা পরীক্ষাগার ছিল সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র। যদি সক্ষমতাগুলি সেখানে পরীক্ষিত হয়, তাহলে দুর্বলতাগুলিও বেরিয়ে আসবে; সেটাই স্বাভাবিক। রুশ বিমান বাহিনীর পাইলটদের ট্রেনিং নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর। বিশেষ করে নিখুঁতভাবে টার্গেটে হামলা করার জন্যে ‘পিজিএম’এর উপর দক্ষতার যেমন ঘাটতি রয়েছে, তেমনি কেউ কেউ বলছেন যে, ‘পিজিএম’এর সরবরাহেও ঘাটতি থাকতে পারে। অন্ততঃ সিরিয়ার শহরগুলিতে নির্বিচার আনগাইডেড বোমা নিক্ষেপ করে রুশরা পশ্চিমা ইন্টেলিজেন্সের এই সন্দেহটাকেই আরও শক্তিশালী করেছে। তথাপি ইউক্রেন যুদ্ধে রুশদের বিমান বাহিনীর যথেষ্ট ব্যবহার না করার কারণ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা মোটেই একমত নয়। তবে তারা ইউক্রেনের যুদ্ধে সামনের দিনগুলিতে সিরিয়ার মতো নির্বিচার বোমাবর্ষণের ব্যাপারে যে ভবিষ্যৎবাণী করছেন, তা যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে রুশদের ব্যাপারে তাদের সন্দেহগুলি আরও শক্ত ভিত পাবে। এই মুহুর্তে পশ্চিমাদের ভুল প্রমাণিত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ রুশরা দেখাতে পারেনি; যা কিনা ইউক্রেনের যুদ্ধে রুশদের সাফল্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

2 comments:

  1. হয়তো রুশ বাহিনী প্রথমদিকে মনে করেছিলো তাদের পদাতিক বাহিনী ইউক্রেনের ভূমিভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর বা দখল করে নিবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি বিধায় রুশ বিমানবাহিনীকে তার মূল্য দিতে হচ্ছে এখন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. যতক্ষণ রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারবে, ততক্ষণ রুশ বিমান বাহিনী হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে? আর যদি রুশ সেনাবাহিনী নিজেরাই বিমান বাহিনীর সহায়তা ছাড়াই পুরো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, তাহলে বিমান বাহিনীর আর দরকারই বা কি থাকলো?

      আর রুশ সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কগুলি কাদায় আটকে গেলে তখনও কি বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে বসে থাকবে? আর ইউক্রেনের বায়রাকতার টিবি-২ ড্রোনগুলি যখন রুশ সেনাবাহিনীর সাপ্লাই কলামের উপর হামলা করবে, তখনও রুশ বিমান বাহিনী হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে? যুদ্ধের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে, এখনও ইউক্রেনের আকাশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেই। এটাই কি যথেষ্ট নয়? ৩'শ অত্যাধুনিক বিমানও কি ইউক্রেনের ১'শর কম বিমানের বিরুদ্ধে যথেষ্ট নয়? নাকি ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এখন বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী বলে আখ্যা দিতে হবে?

      Delete