১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২১
গত ১১ই সেপ্টেম্বর, ৯/১১এর বিশ বছর পূর্তিতে কাবুলে তালিবান সরকারের শপথ নেবার সাইডলাইনে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছিল। পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স প্রধান জেনারেল ফাইজ হামীদ আঞ্চলিক ইন্টেলিজেন্স প্রধানদের একটা আলোচনায় ডাক দেন। যদিও অফিশিয়ালি কোনকিছু বলা হয়নি, তথাপি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু উৎস থেকে জানা যাচ্ছে যে, তার আমন্ত্রণ তালিকায় ছিল চীন, রাশিয়া, ইরান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান। পাকিস্তানের ‘সামাআ টিভি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, অংশগ্রহণকারীরা একমত পোষণ করেন যে, আফগানিস্তানের সমস্যাগুলি আফগানিস্তানের উপর ছেড়ে দেবেন না তারা। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ বলছে যে, দীর্ঘমেয়াদে অঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারা কথা বলেছেন। তবে পত্রিকাটা আরও বলে যে, আফগানিস্তানের আশরাফ ঘানি সরকারের বিরুদ্ধে তালিবানদের সফলতার পিছনে পাকিস্তানের সরাসরি সহায়তা ছিল।
কিন্তু যে ব্যাআপারটা মিডিয়াগুলি আলোচনা করেনি তা হলো, আলোচনায় ভারতের কোন স্থান ছিল না; যদিও ভারত বহু বছর ধরে মার্কিন সমর্থনে তালিবানদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করেছে। আফগানিস্তান নিয়ে ভারতের আলাদা কৌশল তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানকে সঙ্কুচিত করার। তবে সেটা যে মার্কিন সমর্থনের কারণেই সম্ভব ছিল, তা এখন পরিষ্কার। কারণ এখন ভারতীয়রা আফগানিস্তানের কোন ব্যাপারেই আগের মতো নিশ্চিত নয়।
অপরদিকে ইরান ইন্টেলিজেন্স আলোচনায় আমন্ত্রিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভেতর থেকে নিয়মিতভাবে তালিবান বিরোধী বক্তব্য এসেছে। একইসাথে পাকিস্তান বিরোধী বক্তব্যও এসেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দোল্লাহিয়ান সেপ্টেম্বর মাসেই ভারত সফরে যাবেন বলে বলা হচ্ছে। তার সফরে আফগানিস্তানে ইরান এবং ভারতের ভূমিকা আলোচিত হতে পারে বলে বলছে ভারতীয় মিডিয়া ‘দ্যা প্রিন্ট’। তাই আফগানিস্তানের ব্যাপারে এই দুই দেশের অবস্থান কেমন হবে, তা এখন আলোচ্য বিষয়।
ভারত তালিবানকে সমর্থনই দেবে… কিন্তু কেন?
আফগানিস্তানে তালিবানদের ক্ষমতা নেবার ব্যাপারে ভারতীয় মিডিয়া স্ববিরোধী রিপোর্টিং করেছে। তারা কেউ কেউ তালিবান বিরোধী খবর প্রচার করতে গিয়ে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরতেও পিছপা হয়নি। ভারতীয় মিডিয়া ‘দ্যা ওয়্যার’ বলছে যে, গত ৭ই সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের উত্তর পূর্বের পাঞ্জশির উপত্যকায় তালিবানরা আহমেদ মাসুদের অনুসারী বিদ্রোহী গ্রুপের বিরুদ্ধে বিজয় আর্জনের ঘোষণা দেবার সাথেসাথে ভারতের ‘রিপাবলিক টিভি’ বলে যে, পাঞ্জশিরে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তালিবানদের পক্ষে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে। প্রতিবেদনে তারা একটা ভিডিও প্রচার করে, যা তারা লন্ডন থেকে প্রচারিত আফগানিস্তানভিত্তিক মিডিয়া ‘হাসতি টিভি’র কাছ থেকে পেয়েছে বলে উল্লেখ করে। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে এই খরব এবং ভিডিও পুরোটাই ছিল মিথ্যা। কিন্তু এই খবর ভারতের বেশিরভাগ মিডিয়াতে প্রচার করা হয়। ‘টাইমস নাউ নাভভারত’ এবং ‘জী হিন্দুস্তান’ ঐ একই ভিডিওখানা প্রচার করে। ফারান জেফরি নামের একজন অনলাইন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, ৬ই সেপ্টেম্বর ‘হাসতি টিভি’র প্রচার করা ঐ ফুটেজ প্রকৃতপক্ষে ‘আরমা ৩’ নামের একটা ভিডিও গেম থেকে নেয়া হয়েছে। আর ঐ ফুটেজে দেখানো বিমান হলো মার্কিন বিমান বাহিনীর ‘এ ১০ ওয়ার্থগ’ বিমান। আরেকটা ফুটেজ প্রচার করে ‘টিভি ৯ ভারতবর্ষ’; এবং বলে যে, এটা পাঞ্জশিরের যুদ্ধে পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ। ‘ইউকে ডিফেন্স জার্নাল’এর এক লেখায় বলা হয় যে, ঐ ফুটেজ ধারণ করা হয়েছে ব্রিটেনের ওয়েলসের পাহাড়ি এলাকায়। ‘ম্যাক লুপ’ নামের ঐ জায়গাটা এখন একটা পর্যটন স্থান; সেখানে অনেক মানুষ যায় খুব কাছে থেকে ব্রিটিশ ও মার্কিন বিমান বাহিনীর বিমানের প্রশিক্ষণ মহড়া দেখতে এবং ছবি তুলতে। এই রিপোর্টিংগুলি থেকে পরিষ্কার যে, ভারতীয় মিডিয়ার একাংশ তালিবানদের পছন্দ করেনা বিধায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ছড়িয়েছে। আবার ভারতীয় মিডিয়ার আরেকাংশ সেই মিথ্যা তথ্যকে জনসন্মুখে উন্মোচিত করেছে।
ভারতীয় চিন্তাবিদেরা বাস্তবতাকে ধরেই এগুচ্ছে। ভারতীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ বা ‘ওআরএফ’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর কাতারের দোহায় তালিবানদের সাথে আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন। এতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের ভুমিকা বেশ বড় হয়েছিল বলে বলা হয়। তবে তখনও মার্কিনীরা আফগানিস্তান ছেড়ে যায়নি। গত অগাস্টে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর পলায়নের পর ‘ওআরএফ’ সেই ব্যাপারটাকে নিয়েই এগিয়ে যাবার কথা বলে। সিনিয়র ফেলো মায়া মিরচানদানি এক লেখায় বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগের পর ভারতকে ঠিক করতে হবে যে, তারা কি ছোট কারণে তালিবানকে ঘৃণা করে যাবে, নাকি চীন ও পাকিস্তানের কাছে আফগানিস্তানকে ছেড়ে না দিয়ে ফাঁকা স্থান পূরণ করবে।
ভারতের প্রথম সাড়ির মিডিয়াতে উগ্র জাতীয়তাবাদী লেখাও দেখা যাচ্ছে। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’তে এক লেখায় ভারতীয় লেখক সুনীল সরন ভারত সরকারকে তালিবানদের পক্ষ নিতে বলছেন। কারণ তালিবানদের এই সরকার বাস্তববাদি চিন্তার সরকার। তার কথায় যেহেতু পাকিস্তান একটা দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হবে না কখনোই, তাই ভারতের উচিৎ হবে পাকিস্তানকে ভেঙ্গে ফেলা। আর এতে সহায়তা করতে পারে আফগানিস্তান। তিনি বলেন যে, ভারতের উচিৎ হবে তালিবানদেরকে পক্ষে নিয়ে এসে পাকিস্তানের খাইবার পুখতুনওয়ালা অঞ্চল আফগানিস্তানের সাথে জুড়ে দেয়ার জন্যে আফগানদের সহায়তা করা। ভারত সরকার আফগানিস্তানের উন্নয়নে ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে; যদিও এটা ভারতীয়দের কাছে পরিষ্কার ছিল যে, মার্কিনীরা যুদ্ধ জিততে পারছে না। তবে তিনি মার্কিনীদের হারের জন্যে পাকিস্তানকে দায়ী করেন। আফগানিস্তান পুননির্মাণে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে, তার একটা অংশ ভারত দিতে পারে। ভারত না আসলে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য রাষ্ট্র সেই স্থান নিয়ে নেবে। এতদিন ভারত তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়াই করা মার্কিনীদের পুতুল সরকারকে সহায়তা দিলেও বর্তমানে তালিবানরা ভারতের তৈরি করে দেয়া অবকাঠামোই ব্যবহার করছে।
তবে সকলে আবার অতটা উগ্র চিন্তা ধারণ করছেন না। আরেক ভারতীয় মিডিয়া ‘দ্যা কুইন্ট’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, আফগানিস্তানে অবস্থান নিতে ভারতের হয়তো রাশিয়ার উপর নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তবে আফগানিস্তানে ভারতকে স্থান দিতে রাশিয়া কতটা আগ্রহী হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যদিও রুশরা চায় যে, আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকুক, তথাপি ইসলামাবাদকে ক্ষেপিয়ে রাশিয়া ভারতকে টেনে নিয়ে আসবে না; কারণ তালিবানদের উপর ইসলামাবাদের যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। তবে রাশিয়ার সহায়তায় ভারত তালিবানদের সাথে আলোচনায় বসতে পারে বলে সেখানে বলা হচ্ছে। একইসাথে চীন এবং ইরানের সাথেও আলোচনায় বসার জন্যে বলা হয়। তবে তালিবানদের স্বীকৃতি দেয়া ভারতের জন্যে অত্যন্ত কঠিন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগের পর আফগানিস্তানের বাস্তবতা মেনে নিয়েই ভারতীয়রা এগিয়ে যেতে চাইছে। এক্ষেত্রে উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং বাস্তববাদীরা উভয়েই বলছেন তালিবানদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে। আফগানিস্তানে কয়েক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ছেড়ে আসা ভারতীয়দের জন্যে কঠিন ছিল। আর এতকাল আফগানিস্তানে থেকে তালিবানদের বিরুদ্ধে সহায়তা দেয়ার পর এখন সেখানে পাকিস্তানের প্রভাবে তালিবানদের নিয়ন্ত্রণ দেখাটা তাদের জন্যে পীড়াদায়ক হয়েছে। তাদের মিডিয়াতে তালিবানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াবার প্রবণতা ভারতীয়রা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। যাদের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে তারা এতটা আগ্রহী, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর ছড়ানো কেন? জুন মাসেই কাতারি কূটনীতিকের বরাত দিয়ে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ বলে যে, ভারতীয় কর্মকর্তারা তালিবানের সাথে আলোচনা করছে।
ইরান … শিয়াদের রক্ষা করবে, নাকি বাস্তবতা মেনে নিয়ে এগুবে?
গত ৬ই সেপ্টেম্বর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ সাংবাদিকদের বলেন যে, পাঞ্জশির উপত্যকায় বিমান হামলার যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা ইরান সরকার কঠোরতম ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছে। এখানে কোন বিদেশী হস্তক্ষেপ রয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। যেটা এখন পরিষ্কার তা হলো, খতিবজাদেহ যে ‘খবর’এর উপর ভিত্তি করে এই মন্তুব্য করেছিলেন, তার পুরোটাই ছিল মিথ্যা খবর। উল্টো পাঞ্জশিরে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা তাজিকরাই বলেছে যে, তাজিকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া আফগান বিমান বাহিনীর বিমানগুলি তাজিকিস্তানের বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে তালিবানদের উপর বিমান হামলা চালিয়েছে।
৭ই সেপ্টেম্বর ইরানের পার্লামেন্টের এক বদ্ধদুয়ার বৈঠকে দেশটার রেভোলিউশনারি গার্ড কোর বা ‘আইআরজিসি’র প্রধান এসমাইল ঘানি আফগানিস্তানের ব্যাপারে ইরানের কৌশল তুলে ধরেন। পার্লামেন্ট সদস্যদের কথায় তিনি আফগানিস্তানে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকারের ব্যাপারে ইরান সরকারের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। আফগানিস্তানের শিয়াদের জন্যে ইরানের সমর্থনের ব্যাপারেও তিনি কথা বলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে শিয়াদের সাথে সুন্নিদের দ্বন্দ্ব দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন। একইসাথে ঘানি এও বলেন যে, ইরানের উচিৎ হবে আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা যাতে সেখানে সুন্নিদের সাথে শিয়াদের দ্বন্দ্ব প্রতিহত করা যায়। আফগানিস্তানে ইরানের অবস্থানের ব্যাপারে ‘আইআরজিসি’ ছাড়াও লিবারালরাও কথা বলছেন।
ইরানের লিবারাল পত্রিকা ‘সার্ঘ’এর এক লেখায় বলা হয় যে, ইরানের সরকারি মিডিয়াতে পাঞ্জশির যুদ্ধকে খুব একটা বড় গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়নি। এছাড়াও তালিবানদের অধীনে কাবুলের জীবনযাত্রাকে একেবারেই স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরা হয়। পত্রিকাটা বলে যে, কট্টরপন্থীরা আহমেদ মাসুদকে এড়িয়ে গেছে। আফগানিস্তানে ইরানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হোসেইন জাফারিয়ান বলেন যে, কট্টরপন্থীরা মাসুদের চরিত্র হনন করেছে। মাসুদ ইরানের সমর্থন চেয়ে না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়েছেন। এক টুইটার বার্তায় ‘ইউনিভার্সিটি অব তেহরান’এর প্রফেসর সাদেঘ জিবাকালাম বলেন যে, সিরিয়াতে বাশার আল আসাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ইরান এবং রাশিয়া ৫ লক্ষ সিরিয়কে হত্যা করেছে। কিন্তু পাঞ্জশিরে হত্যাকান্ড বন্ধ করায় কিছুই করেনি; যেখানে ফারসি ভাষাভাষী শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের লোকেরাও ছিল। ইরানের ‘রিফর্মস ফ্রন্ট’এর বিবৃতিতে বলা হয় যে, আফগানিস্তান এবং পাঞ্জশিরে জাতিগত হত্যাযজ্ঞের সম্ভাবনা রয়েছে। এবং তারা সরকারকে একটা ‘দুর্যোগকালীন টাস্কফোর্স’ গঠন করার অনুরোধ জানায়, যার কাজ হবে আফগান নীতি নিয়ে কূটনৈতিক কাজ করা।
ইরানে কেউ কেউ দাবি তুলেছিল যে, হাজারাদের মাঝ থেকে রিক্রুট করা ‘ফাতেমিউন ব্রিগেড’কে তালিবানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হোক। ২০১৪ সালে এই সংস্থাকে তৈরি করা হয়েছিল সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে। তবে ৭ই সেপ্টেম্বর ইরানের সরকারের মুখপাত্র ‘ফার্স নিউজ এজেন্সি’র এক লেখায় পাল্টা যুক্তি দেয়া হয় যে, মাত্র ১৫ হাজার ‘ফাতেমিউন’ প্রায় ১ লক্ষ তালিবানের বিরুদ্ধে কিই বা করতে পারে। উল্টো এতে শিয়াদের সাথে সুন্নিদের বড় আকারের যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। সিরিয়া আর আফগানিস্তানের বাস্তবতা ভিন্ন। সিরিয়াতে ইরান একটা ক্ষমতাসীন সরকারের অনুরোধে হস্তক্ষেপ করেছে; এবং সেখানে শিয়াদের এবং ইরানের প্রতি হুমকি মোকাবিলায় বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করেছে। একইসাথে ‘ফার্স’ বলছে যে, ইয়েমেনে হুথিদের সহায়তা দেবার জন্যে ২০১৫ সালে সৌদি সামরিক হস্তক্ষেপের পর থেকে ইরান সামরিক উপদেষ্টা পাঠিয়েছে। তবে পাঞ্জশিরের যুদ্ধে অংশ নেয়া বিদ্রোহীরা অথবা তালিবান, কোন পক্ষই আফগান জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না বলে সেখানে বলা হয়।
ইরানের বাস্তবতা যে কতটা পরিবর্তিত হয়ে গেছে, তা বোঝা যাবে ২০২০ সালে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের ‘টিওএলও নিউজ’এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে, ‘ফাতেমিউন ব্রিগেড’কে আফগান সেনাবাহিনীর সহায়তায় আইসিসের বিরুদ্ধে মোতায়েন করা যেতে পারে। অথচ এখন সেই ‘ফাতেমিউন ব্রিগেড’এর আকার তালিবানদের তুলনায় ছোট বলে বাস্তবতা মেনে নিচ্ছে ইরান সরকার। তালিবানদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে সরাসরি হস্তক্ষেপের পক্ষে লবিং করছে লিবারালরা। তবে কট্টরপন্থীরা সেতুলনায় ধীরে চলার পক্ষপাতি। উভয় পক্ষই আফগানিস্তানে শিয়াদের স্বার্থকে সমুন্নত রাখার পক্ষে কথা বললেও কট্টরপন্থীরা সামরিক হস্তক্ষেপ না করে বরং কূটনৈতিকভাবে এগুবার পক্ষে।
ভারত এবং ইরান হঠাত করেই রূড় বাস্তবতার মাঝে পরে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র যতদিন আফগানিস্তানে অবস্থান করেছে, ততদিন ইরান এবং ভারত উভয়েই আফগানিস্তানে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছিল। যদিও ইরান নিয়মিতই বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে শিয়াদের সাথে সুন্নিদের দ্বন্দ্ব দেখতে চায়, তথাপি ইরানই চেয়েছে শিয়াদের মাঝ থেকে রিক্রুট করা ‘ফাতেমিউন ব্রিগেড’কে আফগান সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধ করাতে। এখন কাবুলে সরকার পরিবর্তনের কারণে এই প্রকল্প তেহরানের নেতৃত্বের কাছে বাস্তবতা বিবর্জিত ঠেকছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের ফলাফলস্বরূপ উভয় দেশই পাকিস্তানকে বাইপাস করতে গিয়ে রাশিয়াকে পাশে পেতে চাইবে। কিন্তু রাশিয়াও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গিয়ে এমন কোন কর্মকান্ডকে সমর্থন দেবে না, যা কিনা পুরো অঞ্চলকে অস্থির করতে পারে। কারণ কাবুলের ইন্টেলিজেন্স বৈঠকের পর এটা এখন পরিষ্কার যে, আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ এখন কার হাতে।
No comments:
Post a Comment