২৪শে জুন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশাল মিডিয়ায় ঘোষণা দেন যে, ইরানের সাথে ১২ দিনের যুদ্ধের অবসান হয়েছে, তখন এটা অনেকের জন্যেই বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। ট্রাম্প ইরানকে ধন্যবাদ দেন যে, ইরান কাতারের আল-উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে হামলার আগে সতর্ক বার্তা দিয়েছিল। 'বিবিসি'র এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, এটা ছিল সবচাইতে অমায়িক যুদ্ধের একটা উদাহরণ! কারণ ইরান একদিকে যেমন আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছিল, তেমনি ট্রাম্প ইরানকে ধন্যবাদ দিয়েছেন কাউকে হতাহত না করার জন্যে। ট্রাম্প যখন বলেছেন যে, তিনি আশা করছেন না যে, ইরান এরপর আর কোন হামলা করবে, তখন এটা চিন্তা করা কঠিন যে, ইরান যুদ্ধ চালিয়ে নেবে। তবে ট্রাম্প ইস্রাইলকেও বলেছেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত না করতে।
অন্ততঃ গত দুই সপ্তাহে মিডিয়া এবং সোশাল মিডিয়াতে সত্য-অসত্য মিলে যা প্রচারিত হয়েছে, তা সাধারণ মানুষকে ঘোরের মাঝে রাখার জন্যে যথেষ্ট ছিল। অনেকে তো মনে করা শুরু করেছিলেন যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে কিনা? এখানেই ভূরাজনীতির খেলাগুলি; যা খুবই সাধারণ চিন্তার উপর; কিন্তু সাধারণের জন্যে বোঝা খুবই কঠিন। অন্ততঃ পত্রিকা পড়ে কারুর পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব নয়।
যুদ্ধ সম্পর্কে পশ্চিমা চিন্তাবিদদের কথাগুলি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেগুলি বলে দেয় যে, পশ্চিমারা কি চাইছে। আর সেটা একইসাথে বলে দেয় যে, ইরান পশ্চিমাদের ইচ্ছাগুলিকে কতটা গুরুত্বের সাথে দেখেছে বা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে কিনা। কেনই বা ইরান চার দিন আগে খালি করে ফেলা কাতারের আল-উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করলো? আর ট্রাম্প কেনই বা এর প্রত্যুত্তর না দিয়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেন? মোট কথা, পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মন্তব্যগুলি শুনে বোঝা যায় যে উভয় পক্ষ একই সুরে নাচার চেষ্টা করছে কিনা। যদি সেটা হয়েই থাকে, তার অর্থ হলো, যুদ্ধবিরতি খুবই সন্নিকটে।
ফোর্দো এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার কি হবে?
‘স্কাই নিউজ'এর সাথে কথা বলতে গিয়ে ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক 'রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট' বা 'রুসি'র প্রাক্তন প্রধান মাইকেল ক্লার্ক বলছেন যে, যেহেতু খবরে প্রকাশ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমাবর্ষণের আগে ইরানিদেরকে আগেভাগে সতর্ক করেছিল, তার অর্থ হলো ইরান যথেষ্ট সময় পেয়েছে তাদের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা খালি করার। ইরানের খুব ভালো করেই জানার কথা যে, সারা দুনিয়ার স্যাটেলাইটগুলি এখন ফোর্দোর ছবি তুলছে। তাই ইরান যখন ফোর্দোর স্থাপনার পাশের রাস্তায় ২০টার মতো ট্রাক জমা করে রেখেছিল, সেটা হতে পারে যে, ইরান জানান দিচ্ছিলো যে, তারা ফোর্দো থেকে এনরিচড ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিচ্ছে; অথবা তারা হয়তো সারা বিশ্বকে জানাতে চাইছিলো যে, তারা ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিচ্ছে; যদিও তারা সেটা সেই মুহুর্তে করেনি। যদি ধরে নেয়া হয় যে, ইরান ফোর্দো থেকে এনরিচড ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে, তথাপি এটা নিশ্চিত নয় যে, কি পরিমাণ এনরিচড ইউরেনিয়াম সেখান থেকে সরানো সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও সেগুলি দিয়ে একটা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা খুব সহজ কাজ নয়। এনরিচড ইউরেনিয়াম থেকে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে গেলে যথেষ্ট যন্ত্রপাতি এবং স্থাপনার প্রয়োজন; যেগুলি ইস্রাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ধ্বংস করেছে; বা সেগুলির যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছে। এর ফলে ইরান যদি একটা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে যায়, তাহলে তাকে সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনাগুলিকে আবারও তৈরি করতে হবে; যা বহু সময়ের ব্যাপার। মোটকথা এই আক্রমণের মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রকল্প অনেক পিছিয়ে গেলো।
মার্কিন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়ান ব্রেমার 'ইউরেশিয়া গ্রুপ'এর 'জি-জিরো মিডিয়া'র এক পডকাস্টে বলছেন যে, আলোচনার সময় যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছিলো যে, ইরান নিজেই তার স্থাপনা ধ্বংস করে ফেলুক। এটা ইরানের নেতৃত্বের জন্যে অতি অপমানজনক ছিল। তাই ইরানিরা চাইছিলো যে, দরকার হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার মুখে তাদের সামরিক দুর্বলতাকেই তুলে ধরবে; যা হয়তো ইরানের জনগণের কাছে নিজেদের স্থাপনা নিজেরা ধ্বংস করার চাইতে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তাই ইরানের নেতৃত্ব চাইছিলো যে, মার্কিনীরাই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করে ফেলুক। অপরদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিঃসন্দেহে ইরানের সাথে সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করতে চাননি। তিনি জানেন যে, বেশিরভাগ মার্কিন জনগণ সেটা সমর্থন করবে না; এমনকি তার সমর্থকদের মাঝেও অনেকে যুদ্ধ চাইবে না। ট্রাম্প চেয়েছেন একটা ঝটপট যুদ্ধ; অনেকটা 'টিকটক-স্টাইলে'। তার প্রথম টার্মের সময় ২০১৯এর সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের আবকাইক তেল শোধনাগারে ইরানের তৈরি ড্রোন দিয়ে হামলা হলেও আরব দেশগুলি এবং ইস্রাইলের যথেষ্ট চাপ থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। কিন্তু এর প্রায় তিন মাস পর ২০২০এর জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজ ছাড়ার ঠিক আগ মুহুর্তে ট্রাম্প ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন। ইরানিরা যথেষ্ট রাগ প্রদর্শন করলেও অকার্যকর লোক দেখানো কিছু হামলার মাঝেই ইরান তাদের প্রত্যুত্তরকে সীমিত করেছিল। ট্রাম্প হয়তো আশা করেছেন যে, এবারও ইরান সেরকমই আচরণ করবে। ব্রেমার বলছেন যে, যদি ইরান এবং তার প্রক্সিগুলির হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাঝে তেমন একটা হতাহত না হয়, তাহলে ট্রাম্প ধরে নিতে পারেন যে, এই যাত্রায় তিনি জিতে গেছেন। একইসাথে ইস্রাইলও ধরে নেবে যে, তারা জিতেছে; যদিও এতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি।
ইরানে মার্কিন হামলার আন্তর্জাতিক প্রভাব কতটুকু?
যুদ্ধবিরতির আগে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা 'সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি' বা 'সিআইএ'র প্রাক্তন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গ্লেন কর্ন নিরাপত্তা বিষয়ক ম্যাগাজিন 'সাইফার ব্রীফ'এর সাথে সাক্ষাতে বলেছেন যে, কেউ কেউ বলছেন যে, রাশিয়া ইরানকে সামরিক সহায়তা দেবে। কিন্তু তিনি মনে করছেন না যে, রাশিয়ার আদৌ সেই বাস্তবতা রয়েছে। কারণ তারা নিজেরাই ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে বের হতে পারেনি। আর কিছুদিন আগেই যখন সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন ঘটেছিল, তখনও রাশিয়া কিছুই করতে পারেনি। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের কারণে যদি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো খুশি হতে পারেন; কিন্তু তার বন্ধু শি জিনপিং মোটেই খুশি হবে না। তবে পুতিন হয়তো দুশ্চিন্তায় থাকবেন যে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে তার আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হারাতে পারেন। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা থেকেও পুতিন শিক্ষা নিতে পারেন। সত্য বা মিথ্যা সেটা নিশ্চিত নয়, তবে বাজারে ছড়িয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইস্রাইলকে সহায়তা দেয়ার জন্যেই ইরানের সাথে আলোচনা চালিয়ে নিয়েছে; যাতে করে ইরানিদের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে থাকে। এর মাধ্যমে পুতিনের জন্যে শিক্ষা হলো, ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন নীতি কি হবে, তা আগে থেকে বলা কঠিন।
ইরান কি হরমুজ আটকে দিতে পারতো?
যুদ্ধবিরতির আগে গ্লেন কর্ন বলছিলেন যে, বর্তমান অবস্থা থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক বন্ধুদের উপর, বিশেষ করে তাদের তেলের স্থাপনাগুলির উপর হামলা করে, অথবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে অথবা মধ্যপ্রাচ্য বা এর বাইরে মার্কিন স্বার্থের উপর সামরিক বা বড় আকারের সাইবার হামলা করে। রালফ গফ বলছেন যে, এই মুহুর্তে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, ইরানের কিছু না কিছু প্রত্যুত্তর দিতেই হবে। কাশেম সুলাইমানিকে হত্যার পর ইরান প্রতিশোধ নেবে বলেছিল; কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হলেছিল। কিন্তু তার মানে এ-ই নয় যে, তারা সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হবে। ইরানের 'আইআরজিসি' ইরানের বাইরে সরকার বিরোধীদেরকে টার্গেট করতে পারে। এছাড়াও ইরানের সাইবার হামলার সক্ষমতাও রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আগে ‘সিআইএ'তে ইরানের জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাক্তন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ম্যানেজার নরমান রুল 'সাইফার ব্রীফ'কে দেয়া সাক্ষাতে বলেছেন যে, হরমুজ প্রণালির কথা উঠলেই সকলে তেলের কথা চিন্তা করে। কিন্তু তেল ছাড়াও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে রপ্তানি হয়ে থাকে। যেমন, কাতার বর্তমানে চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়ার মতো দেশগুলির জন্যে প্রধান এলএনজি সরবরাহকারী। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে পেট্রোকেমিক্যাল সরবরাহের একটা বড় অংশ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মিথানল এবং রাসায়নিক সারের বড় সরবরাহকারী এখন মধ্যপ্রাচ্য। মধ্যপ্রাচ্য থেকে গ্যাস এবং এলএনজি সরবরাহের সমস্যা তৈরি হলে রাসায়নিক সারের সরবরাহেও সমস্যা তৈরি হবে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাথর, চুনাপাথর ও ক্লিংকার ভারত এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলিতে রপ্তানি হয়। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিও খাবার, চিনি, সয়াবিন ইত্যাদির জন্যে আমদানির উপর নির্ভরশীল। হরমুজ প্রণালি আটকে গেলে এই সকল পণ্যের সরবরাহেই সমস্যা তৈরি হবে এবং এগুলির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারলে ইরান সাময়িকভাবে এর সুবিধা নিতে পারবে। কারণ ইরানের রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টা তেলের ট্যাঙ্কার জাহাজ; যেগুলি প্রায় ৪০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল নিয়ে পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রে অবস্থান করছে। তেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হলেই এই জাহাজগুলি চীনের তেল শোধনাগারগুলিতে তেল সরবরাহ করবে। নরমান রুল বলছেন যে, ইরানের সক্ষমতা রয়েছে হরমুজ প্রণালি দিয়ে চলাচলকারী জাহাজের জন্যে ব্যাপক সমস্যা তৈরি করার। জিপিএস জ্যামিং-এর কারণে কোন একটা জাহাজ তার অবস্থান হারিয়ে ভুলবশতঃ ইরানের জলসীমানায় ঢুকে যেতে পারে। তখন ইরানিরা সেই জাহাজটাকে দখলে নিয়ে নিতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন রকম অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করতে পারে।
ইরানের অস্ত্রগুলি সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন ব্রিটিশ সামরিক বিশ্লেষক এবং রয়াল নেভির প্রাক্তন কর্মকর্তা এইচ আই সাটন। তিনি তার 'কোভার্ট শোরস' চ্যানেলে এক বিশ্লেষণে বলছেন যে, ইরানের নৌবাহিনী এবং আইআরজিসি-র জাহাজগুলি যত সুন্দর দেখতেই হোক না কেন, সেগুলি পশ্চিমাদের জন্যে কোনরূপ হুমকি হিসেবে দেখা দেবে না। ইরানের সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্র হতে পারে সামুদ্রিক মাইন। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের মাইন অপসারণের জন্যে জাহাজ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু এগুলির কাজ সঠিকভাবে করতে হলে জাহাজগুলিকে ইরানের আক্রমণ থেকে পুরোপুরি সুরক্ষা প্রদান করতে হবে; যা মোটেই সহজ হবে না। ইরানের ছোট ছোট সাবমেরিনগুলি, বিশেষ করে 'ঘাদির-ক্লাস'এর সাবমেরিনগুলি টর্পেডো এবং মাইনের মাধ্যমে হরমুজ প্রণালির পণ্যবাহী জাহাজগুলি ধ্বংস করতে পারে। ইরানের জাহাজ-ধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলির কিছু ইয়েমেনের হুথিরা ব্যবহার করেছে। এগুলির সফলতা নির্ভর করছে কোন জাহাজে হামলা করা হচ্ছে এবং জাহাজে কি পণ্য বহণ করা হচ্ছিলো সেটার উপর। এগুলি চীনা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অতটা শক্তিশালী না হলেও জাহাজের যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে। ইরানের জাহাজ-ধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মাঝে রয়েছে 'নূর' (চীনা 'সি-৮০২'এর কপি) এবং 'নাসর-১' (চীনা 'সি-৭০৪'এর কপি)। এগুলি জাহাজ ডুবাতে সক্ষম না হলেও যেকোন জাহাজের যথেষ্ট ক্ষতি করতে সক্ষম। তবে একবার ব্যবহার করার পরেই এগুলির লঞ্চারগুলি খুব সম্ভবতঃ পশ্চিমা ইন্টেলিজেন্স খুঁজে পাবে এবং ধ্বংস করে ফেলবে। ইরানের ছোট ছোট স্পীডবোটগুলি যথেষ্ট গুরুত্ব বহণ করবে; বিশেষ করে মনুষ্যবিহীন সুইসাইড বোটগুলি, যেগুলি ওয়ারহেড বহণ করে পণ্যবাহী জাহাজের গায়ে হামলা করতে পারে। ইয়েমেনের হুথিরা এগুলির কার্যকারিতা দেখিয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে ইরান নিঃসন্দেহে এরকম অনেক বোট একসাথে পানিতে নামাতে পারবে। এছাড়াও ইরানের রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের সুইসাইড ড্রোন বিমান; যেগুলি হয়তো কোন জাহাজ ডোবাতে পারবে না, তবে একসাথে অনেকগুলি ছুঁড়লে একটা শক্ত ডিটারেন্স তৈরি করতে পারে। যদিও এগুলিকে গুলি করে ধ্বংস করাটা খুব কঠিন নয়, তথাপি একটা বেসামরিক জাহাজের জন্যে এটা যথেষ্টই হুমকি। আর এগুলির শক্তিশালী দিক হলো পাল্লা। ভারত মহাসাগরের গভীরে গিয়েও এগুলি একটা জাহাজে হামলা করতে পারবে। ইরানের যেসকল স্বল্প পাল্লার বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলি হরমুজে বেশ কাজ করবে; বিশেষ করে পশ্চিমা মাইন অপসারণ হেলিকপ্টার এবং সার্ভেইল্যান্স ড্রোনের বিরুদ্ধে এগুলি যথেষ্ট কার্যকর হতে পারে। ইয়েমেনের হুথিরা ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটা মার্কিন 'রীপার' ড্রোন ধ্বংস করে যথেষ্ট নাম কামিয়েছে।
নরমান রুল বলছেন যে, ইরানের সক্ষমতা রয়েছে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার। তবে সেটা তারা খুব সম্ভবতঃ বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না। কারণ ১৯৮০এর দশকে ইরান যখন প্রথমবারের মতো এই কাজটা করেছিল, সেই সময় থেকে প্রযুক্তি অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। এবং যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং আরব দেশগুলির কাছে যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে এগুলিকে মোকাবিলা করার। তবে ইরান যদি কয়েক সপ্তাহের জন্যে হরমুজ বন্ধ করে রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে তা তেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্যে যথেষ্ট।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদ ইয়ান ব্রেমার বলেছেন যে, যেহেতু ইরানের তেলের স্থাপনাগুলি এখনও হামলার শিকার হয়নি, তাই ইরানও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা বা আরব দেশগুলির তেলের স্থাপনাগুলির উপর হামলার মতো সিদ্ধান্ত না-ও নিতে পারে। ইরানিদের দিক থেকে অনেক হুমকি শোনা গেছে; কিন্তু বাস্তবে সেটা করাটা ভিন্ন বিষয়। এরূপ হামলা মুহুর্তের মাঝেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যকে ১'শ ডলারের উপর নিয়ে যেতে পারে। অপরদিকে মার্কিনীরা হরমুজে ইরানের যেকোন আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্যে যথেষ্টই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ব্রেমার বলছেন যে, এখনও পর্যন্ত ইরানি নেতৃত্ব সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু ইস্রাইলিরা যখন একসাথে ইরানের সকল শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বকে হত্যা করেছে, তখন কতটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ইরানিরা সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই নেবে? এমনও হতে পারে যে, যারা নতুন নেতৃত্ব নেবে, তারা তাদের আবেগকে প্রাধান্য দেবে। আর যখন ইরানের সক্ষমতা দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে, তখন নেতৃত্বে আসা নতুন লোকেরা আগের মতোই সিদ্ধান্ত নেবে - এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ইয়ান ব্রেমার পরবর্তীতে 'সিএনএন'এর সাথে এক সাক্ষাতে বলছেন যে, ইরানের সরকার ইস্রাইল এবং মার্কিন সামরিক স্থাপনার উপর হামলাগুলিকে বেশ বড় করে দেখিয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দাবি করেছে। এবং একইসাথে তারা বলেছে যে, ফোর্দোতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই কথাগুলি তারা বলেছে ইরানের জনগণকে ঠান্ডা করার জন্যে। অথচ সত্যটা হলো, মার্কিন ঘাঁটিগুলিতে হামলার আগে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছে, যাতে করে মার্কিনীদের মাঝে কেউ হতাহত না হয়। ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিচ্ছিলো যে, যুক্তরাষ্ট্র যেন নতুন করে আর কোন হামলা না করে। ইরান ইচ্ছা করলে এমন সকল টার্গেটে হামলা করতে পারতো, যেখানে মার্কিনীদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ততটা শক্তিশালী নয়। অথবা তারা যদি আগাম বলে না দিতো, সেক্ষেত্রেও মার্কিনীদের জন্যে কিছুটা সমস্যা হতো। তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার দিকেও আগায়নি। ইরানের নেতৃত্ব বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগিয়েছে। অপরদিকে ট্রাম্প ইস্রাইলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছেন ঠিকই কিন্তু ইস্রাইল সেটা কতটুকু মানবে, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। আর ইস্রাইল যদি ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে ইরানেও যে আবেগপ্রবণ হয়ে কেউ কিছু করবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
ইরানের প্রক্সিগুলির ভবিষ্যৎ কি?
মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা 'সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি' বা 'সিআইএ'র প্রাক্তন কর্মকর্তা রালফ গফ নিরাপত্তা বিষয়ক ম্যাগাজিন 'সাইফার ব্রীফ'এর সাথে সাক্ষাতে বলছেন যে, ইস্রাইলের ইন্টেলিজেন্স একদিকে যেমন ৭ই অক্টোবরের হামলায় নিজেদের ব্যার্থতা দেখিয়েছে; ঠিক তেমনি পরবর্তীতে আশ্চর্য্য রকম নিখুঁতভাবে হামাস এবং হিযবুল্লাহর নেতৃত্বকে ধ্বংস করে তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। এর মাধ্যমে ইস্রাইল ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সিগুলিকে একেবারেই দুর্বল করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানে হয়তো অনেকেই প্রশ্ন করা শুরু করবে যে, আঞ্চলিক প্রক্সি এবং পারমাণবিক প্রকল্পের পিছনে ইরান যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছিল, তার কোনটাই শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। আর পর্দার আড়ালে নিশ্চয়ই অনেক বার্তা দেয়া হবে ইরানের প্রক্সিগুলিকে, যাতে করে তারা ভবিষ্যতে ইরানের লেজুড়বৃত্তি করা থেকে দূরে থাকে।
গ্লেন কর্ন বলছেন যে, ইস্রাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র এখন চাইছে হিযবুল্লাহকে পুরোপুরিভাবে নিরস্ত্র করতে। কিন্তু লেবাননের সেনাবাহিনীর সেই সক্ষমতা নেই; এবং একইসাথে লেবাননের সরকারের আর্থিক সক্ষমতা নেই ইস্রাইলি হামলায় লেবাননের ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাগুলিকে পুনর্গঠন করার। অথচ এটা সকলেই জানে যে, লেবাননে হিযবুল্লাহর জনপ্রিয়তার একটা বড় কারণ হলো লেবাননের অর্থনীতিতে ইরানের আর্থিক বিনিয়োগ। তবে গ্লেন কর্ন বলছেন যে, লেবাননে তার পরিচিতদের থেকে তিনি জানতে পারছেন যে, লেবাননের শিয়াদের মাঝে অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে, যখন লেবাননের উপর ইস্রাইলি হামলা চলছিলো, তখন কেন ইরান তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ব্যবহার করেনি? ইরান কেন লেবাননে তাদের বন্ধুদের রক্ষায় এগিয়ে এলো না? আর হিযবুল্লাহর সদস্যরা এখন ইরানের সাথে ইস্রাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হতে চাইছে না। অন্ততঃ সাম্প্রতিক সময়ে ইস্রাইলি ইন্টেলিজেন্স হিযবুল্লাহর নেতৃত্বকে যেভাবে টার্গেট করেছে, সেটার পুনরাবৃত্তি তারা দেখতে চাইছে না। তবে হিযবুল্লাহর মাঝে হতাশ হয়ে যাওয়া কিছু গ্রুপ ইস্রাইল ও মার্কিন টার্গেটে হামলা করার চেষ্টা করলে অবাক হবার কিছু নেই।
ইরানের সরকার পতনের সম্ভাবনা কতটুকু?
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে 'সিআইএ'র রালফ গফ বলেছেন যে, গত কয়েক দশকে ইরানের সরকারের সমর্থনে লেবানন এবং ইরাকের মিলিশিয়ারা বিভিন্ন সময়ে মার্কিন সামরিক সদস্যাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র একটা দুর্বল ইরানের সুযোগ নিয়ে সেই হামলাগুলির শোধ নিয়েছে দেখে তিনি খুশি হয়েছেন। তবে যেহেতু ইরানের সরকার পরিবর্তনকে মার্কিন সরকার তাদের প্রকাশ্য লক্ষ্যের মাঝে রাখেনি, তাই ইরানের সরকারকে তার যতটাই অপছন্দ হোক না কেন, তাদেরকে মেনে নিতেই হচ্ছে। ইয়ান ব্রেমার বলছেন যে, ইস্রাইলিদের সক্ষমতা নেই ইরানের সরকার পরিবর্তন করার। এই কাজটা শুধুমাত্র বোমা ফেলে বা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে করা যাবে না; প্রয়োজন হবে বড় আকারের সেনাবাহিনীর; যেটার ব্যাপারে এই মুহুর্তে পশ্চিমাদের কেউই আগ্রহী নয়। আর আরও বড় কথা হলো, ইরানের ৯ কোটি মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে; যার কোন প্রমাণ এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। বলাই বাহুল্য যে, ইরান সিরিয়া নয়। বরং যেটা হবার সম্ভাবনা বেশি তা হলো, ইরানের দুর্বল হয়ে যাওয়া নেতৃত্ব আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন গ্রুপকে সহায়তা দেবে। এই কাজটা করার জন্যে তাদের হারাবার কিছু থাকবে না; কারণ তাদের ডিটারেন্সগুলি সবগুলিই নিঃশেষ হয়ে যাবে। ইরানিরা জানবে যে, ইস্রাইলিরা যেকোন মুহুর্তে হামলা করে তাদের নেতৃত্বকে হত্যা করতে পারে। এরূপ পরিস্থিতিতে ইরানের নেতৃত্বে যারা থাকবে, তারা অনেক ক্ষেত্রেই সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত না নিয়ে আবেগকে প্রাধান্য দিতে পারে।
ট্রাম্পের সমালোচক হয়েও ইয়ান ব্রেমার বলছেন যে, একদিন আগেও যেটা পরিষ্কার ছিল না তা হলো, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ট্রাম্পের জন্যে একটা বিরাট সফলতা। কারণ কয়েক দশক ধরে কয়েকটা মার্কিন প্রশাসন যেটা করতে পারেনি (ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প বন্ধ করা), সেটা ট্রাম্প করে দেখিয়েছেন কয়েক দিনের মাঝে। ইরান সেভাবেই কাজ করেছে, যা ট্রাম্প চেয়েছেন; একারণেই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। ব্রেমারের কথাগুলি পশ্চিমা চিন্তারই প্রতিফলন – পশ্চিমারা চাইছে মুসলিম বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন জাতিরাষ্ট্রগুলি একে একে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সামনে নিজেদেরকে সঁপে দেয়। ২০০১ সালে আফগানিস্তান, ২০০৩ সালে ইরাক, ২০১১ সালে লিবিয়া এবং সিরিয়া, ২০২৩ সালে গাজা, ২০২৪-২৫ সালে লেবাননের পর ২০২৫ সালে ইরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমা হামলার ইতিহাস যেন আগেই লিখা হয়ে গিয়েছিল। এখন শুধু হিসেব করতে হবে যে, পরবর্তী টার্গেট কে? পাকিস্তান? তুরস্ক? মিশর? বাংলাদেশ? ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে এবং লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে হত্যা করেছে। তারা যখন একটা দেশকে ধ্বংস করেছে, তখন বাকিরা সাইডলাইনে বসে ছিল। তারা কি জানতো না যে, তাদের পালা আসছে? হয়তো তারা জানতো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির সামনে ইরানের আত্মসমর্পণ দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আগে থেকে জানলেও তারা তাদের তথাকথিত বাস্তবতাকে মেনেই নিয়েছে। এবং সেই অনুযায়ীই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে - একই সুরে নেচেছে। বিনিময়ে তারা আপাততঃ ক্ষমতা ধরে রেখেছে ঠিকই, কিন্তু রাষ্ট্র, বিশেষ করে রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি, হয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত। এ যেন স্যামুয়েল হান্টিংটনের 'ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস'এর কার্বন কপি। ১৯৯৬ সালে হান্টিংটন কিন্তু ধরেই নিয়েছিলেন যে, মুসলিমরা একসময় একত্রিত হবেই; যা হবে পশ্চিমা সভ্যতার জন্যে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। একারণেই তিনি লিখেছিলেন যে, চীন (যারা খুব সম্ভবতঃ মুসলিমদের সহায়তা করবে) এবং মুসলিম বিশ্বের প্রচলিত ও অপ্রচলিত সামরিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংস করতে হবে। যারা তখন বোঝেনি, আজকেও কি তারা এটা বুঝতে পারছেন না?
Which seems like there might be a economical shift but the political top notch will be remained in the hand of the USA. At least for next 50-100 years... Depends when China is going to intervene.
ReplyDeleteYour analysis depends on a lot of assumptions that are questionable to say the least. At least when the US President is trying to "make America great again", there is no reason to believe that US is still great. Its true that US still the sole Superpower and the most powerful nation on Earth. But it no longer has the capability to do things that it has done in the past; whether unilaterally or with help from others.
DeleteWhen US is dismantling the same system that it had established after WWII, its futile to cling on to the assumption that US will remain the dominating political power in the world. At best, US can remain as the most important military power; although not having a decisive advantage over near peer powers (e.g. China or Russia).
Since US's humiliating retreat from Afghanistan and US's bewildering decision to leave Ukraine to its fate, there are more questions springing up regarding US's commitment to save Taiwan from possible Chinese military actions. And since US's scathing attack on its European allies last February at Munich, one can easily say that US no longer has the political capital to move every stone without applying brute force.
Not only that, after the visible failure of the policy to pursue the so-called 'war on terror' for almost two decades, US no longer has the political strength outside the fortified homes of their vassal rulers in the Muslim World. Blatantly supporting Israel in its genocidal mission against the people of Gaza not only damaged US's moral position in the world, but has undermined the ideological stance of the US and the secular Capitalist Western World as a whole. US is no longer an ideological power spreading and defending its ideology all over the globe; rather its a maniacal Crusader state that brutally represses anyone who tries to challenge its faulty and failed ideology.
US can't go on funding their military wet-dreams by printing US Dollars. It has to stop somewhere! And the end is visible!
I thought you were sick or sth bad happened.......Why usa is dismantling its own system? is it a conscious decision or trying to make a new order?? Yunus is an imp member of WEF, he said few yrs ago that a war is necessary to dismantle the current syste, world cannot go on like its current form. What is your take on this?? Are the bankers of switzerland or d
ReplyDeleteecision maker families cooking sth new??
Thanks a lot for your concern! Good to know that.
DeleteFirst of all, we need to understand that USA didn't establish the World Order after WWII as a philanthropy. USA took control of the world from Britain by force. During WWII, USA forced Britain to concede control on many things; including control of India, giving up military bases in the Caribbeans (that controlled approaches to Panama Canal), control over world reserve currency (Bretton Woods Accord 1944 allowed US Dollar to be one of the world reserve currency). This taking control was not done in one day; rather done through establishment of various institutions; e.g. UN and its affiliated institutions, WTO, World Bank, IMF, IMO, ITU, etc. And also some other international regimes like MTCR, OPCW, NPT, etc. USA invested big amount in these institutions and forced most countries to abide by these; though USA themselves didn't respect many of these institutions when it came to preserving their own national interests.
That said, over time USA saw the degradation of these institutions in terms of not serving the geopolitical goals of the USA. This is partly the result of USA's unilateral moves that undermined these institutions; e.g. running massive extra-judicial killings and torturing during so-called 'war on terror'; attacking Iraq in 2003 on false pretext without support from UN; not sitting with Russia on arms control treaties; supporting genocidal campaigns of Israel that only exacerbated the double standards followed by the West; blaming China for violating UNCLOS treaty, when USA themselves didn't sign on it; making WTO unworkable when USA didn't win cases; etc. USA faced opposition not only from China and Russia, but also from Europe, who had been a ally and a rival in many areas. USA simply didn't want to keep the system that made their opponents gain at the expense of USA. Not only that, USA saw the rise of China amid the failure of their so-called 'war on terror'. USA outsourced all their industries to China and made their own country dependent on imports, money printing, and substandard living standards for much of their middle states. Seeing China's military (especially naval) rise while in parallel, watching the dismantling of USA's highly prized technological industries, USA had to ask the question, what went wrong? They found the answer in the dismantling of the same system that they had themselves setup at the end of WWII.
So, USA is trying to rewrite the World Order in their favour. But this is much harder than what was at the end of WWII. USA was the only power in 1945 with all of its buildings standing. This time, its very different.
Much of the article seems written before ceasefire, perhaps it was very unexpected. Why USA would invade Egypt, when SIS is already serving them? To establish greater israel?? Then why not Jordan ?? And Turkey is for greater israel, i believe. Pakistan to give off its nuclear bomb. But why Bangladesh? They have successfully destabilized Bd. And what about Syria? You mentioned Shara's secendence to power was unexpected even to the westerners. But the way he gained positive coverage in western media, from christian amanpoure, i doubted his true identity. I think he is also a western agent. No way, someone with true j*i*H* connection will be protrayed as a romantic revolutionary in western media, unless he is affiliated with them. MBS, before coming to power got serious coverage in western media like a messiah of kSA, with no bad habit, only one wife unlike others and what not.
ReplyDeleteYes, you are right about the timing of the writing. But these were relevant enough to have a place in the overall writing.
DeleteTo understand about the question regarding Egypt, Turkey, Pakistan or Bangladesh, please go through 'Clash of Civilizations' by Samuel Huntington. Egypt has the biggest army on Israeli border. Only a US vassal ruler stands between that Army and Israel (same since 1950s). Pakistan is important due to nuclear weapons. Already some are complaining that Pakistan is developing ICBM that can reach USA. So, another WMD accusation (like Iraq) developing here. And Bangladesh (also Indonesia) important for their population size.
Syrian regime change was not predicted by most Western analysts. That's not to say that USA didn't want Ahmed Al-Sharaa to start the offensive; but USA wasn't sure whether Al-Sharaa would have full control over the many groups in Syria. This can be understood from statements by former CIA officials who worried about other groups in the south that didn't have direct communication with Al-Sharaa. Al-Sharaa started from the north; and he didn't even reach Damascus when the regime fell. There were already other groups in Damascus before Al-Sharaa even entered Damascus. That wasn't planned. Their appointed winner and president didn't get to see the capture of Damascus - this was surely unplanned. You have rightly pointed out that its now glaringly open to the world what a two-faced agent Al-Sharaa is!