Tuesday, 21 January 2025

ট্রাম্প ঝড়ের শুরু?

২১শে জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং আদর্শগত দ্বন্দ্ব যুক্তরাষ্ট্রকে সবচাইতে বেশি ব্যস্ত রাখবে। ডেমোক্র্যাটদের সাথে মারাত্মক দ্বন্দ্ব, লিবারাল আদর্শের ব্যাপারে মেরুকরণ (যেমন – সমকামিতা, গর্ভপাত, বিচার বিভাগের দলীয়করণ), সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক দৈন্যতা, জাতিগত দ্বন্দ্ব, অভিবাসী নিয়ে কোন্দল, বন্দুকের ব্যবহারে অপরাধ বৃদ্ধি, আত্মহননের হার বৃদ্ধি, গৃহহীন জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি, ইত্যাদি সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করেছে। ট্রাম্পের সময়ে এগুলি আরও একধাপ এগুবে। যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজের সাথেই যুদ্ধরত – ২০২৫ সালে এই সত্যটাই নতুনরূপে সামনে আসবে।


ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ফিরে আসার মাধ্যমে ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান শিবিরের মাঝে মারাত্মক বিবাদের মাঝেই কেটেছে গত ৮ বছর। ২০২৫ সালে ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এই কোন্দলকে বৈশ্বিক অস্থিরতার শীর্ষ কারণ হিসেবে রেখেছেন। মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলেই ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তার প্রথম টার্ম ব্যাপক খাড়াই-উতড়াইএর মাঝ দিয়ে গিয়েছে। এরপর ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিয়ে ট্রাম্প সমর্থকরা ২০২১ সালের ৬ই জুলাই ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিল দখল করে প্রতিবাদ করে। জো বাইডেনের সরকার একদিকে যেমন এই রায়টকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল, তেমনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও এই রায়টের নেতৃত্ব দেবার অভিযোগে মামলা হয়েছিলো। ডেমোক্র্যাটদের ইন্ধনে বহু মামলায় জর্জড়িত হয়ে নির্বাচনের আগে ট্রাম্প সম্পদ ঘাটতির মাঝেও পড়ে যান। এরপর ট্রাম্পের জীবননাশেরও চেষ্টা করা হয় অন্ততঃ দু'বার। এতকিছুর পরেও দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে আসাটা একদিকে যেমন ছিল ঐতিহাসিক ব্যাপার, অপরদিকে তা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মেরুকরণকে আরও স্পষ্ট করে দেয়। অনেকেই মত দিচ্ছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় টার্ম খুব সম্ভবতঃ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে সবচাইতে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে যাচ্ছে।

এক্সিকিউটিভ অর্ডার বনাম বাস্তবতা

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা নেবার সাথেসাথেই বেশ কয়েকটা প্রেসিডেন্সিয়াল এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেন। এগুলির অনেকগুলির ব্যাপারেই তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় অঙ্গীকার করেছিলেন। 'ডয়েচে ভেলে'র সাথে কথা বলতে গিয়ে 'আমেরিকান ইউনিভার্সিটি'র প্রফেসর মিশেল এগান বলছেন যে, মার্কিন কংগ্রেস এবং সিনেটকে বাইপাস করার জন্যে এধরণের সিদ্ধান্তগুলি প্রেসিডেন্ট নিতে পারেন। তবে এসকল আদেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায়; আবার পরবর্তী প্রেসিডেন্টও এগুলিকে পরিবর্তন করতে পারবেন। আইন ব্যবসা 'পিলসবুরি'র সদস্য আইমী ঘোষ 'ডয়েচে ভেলে'কে বলছেন যে, ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা আদেশগুলির কিছু এই মুহুর্ত থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে; আর কিছু বেশ কয়েকটা স্তরের মাঝ দিয়ে যাবে এবং আরও সময় নেবে। যেমন, ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বের হয়ে যাবার আদেশ দিলেও সেটা প্রায় এক বছর লেগে যেতে পারে। 'পিলসবুরি'র ক্রেইগ স্যাপারস্টাইনএর মতে সংস্কৃতি বিষয়ক যেসকল সিদ্ধান্ত ট্রাম্প দিয়েছেন, সেগুলি প্রশাসন এবং কংগ্রেসের প্রথম দিনগুলিতে আলোচিত হবে। এগুলির মাঝে রয়েছে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পুরুষ এবং মহিলার বাইরে আর কোন জেন্ডারকে স্বীকার করবে না। জো বাইডেনের প্রশাসন মার্কিন পাসপোর্টে নিজের জেন্ডার পরিবর্তন করে ফেলা সহজ করে দিয়েছিল; যা ট্রাম্প উল্টে দিয়েছেন। এছাড়াও ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে রায়ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত ১৬'শ ব্যক্তিকে ট্রাম্প ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই ব্যাক্তিদেরকে ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে 'জানুয়ারি ৬এর জিম্মি' বলে আখ্যা দিয়েছেন। আইমী ঘোষ বলছেন যে, এধরণের ক্ষমা সাধারণতঃ যেকোন প্রেসিডেন্ট তাদের সময়সীমার শেষের দিকে দিয়ে থাকেন; ট্রাম্পের মতো প্রথম দিনেই এরূপ সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। তবে আইমী ঘোষ জো বাইডেনের ক্ষমতার শেষ কয়েক ঘন্টায় ক্ষমা করে দেয়া ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করেননি। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সকালে হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে বাইডেন জানুয়ারি ৬ কমিশনের সদস্যদেরসহ বেশ কিছু ব্যক্তির জন্যে আগাম ক্ষমা ঘোষণা করেন। এদের মাঝে রয়েছেন প্রাক্তন সর্বোচ্চ সামরিক অফিসার জেনারেল মাইক মিলি; যার বিরুদ্ধে চীনকে তথ্য দেয়ার অভিযোগে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ উঠেছে। বাইডেন এই ভেবে এটা করেছেন যে, যে ব্যক্তিরা ৬ই জানুয়ারির রায়টে অংশগ্রহণকারীদের বিচার করেছিল অথবা বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার সময় ডেমোক্র্যাটদেরকে সহায়তা দিয়েছিল, ট্রাম্প তাদেরকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারেন।

জ্বালানির ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা

ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি তেলের উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে চায়। একইসাথে তিনি জ্বালানির ব্যাপারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে; যদিও এর অর্থ আসলে কি, সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা 'এনপিআর'কে বলেছেন যে, ট্রাম্পের এই ঘোষণার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষমতার সূচনা করা হবে; যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র খুব স্বল্প সময়ের মাঝে তেল, কয়লা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে। 'ব্রেনান সেন্টার'এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মাধ্যমে ট্রাম্প একদিকে যেমন পরিবেশ বিষয়ক আইনগুলিকে বাইপাস করতে পারবেন, তেমনি অপরিশোধিত তেল রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সক্ষম হবেন। ১৯৭০এর দশকের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার প্রাদেশিক ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে বিভিন্ন আইনকে বাইপাস করে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের মজুতকে উন্নীত করেছিলেন। তবে পুরো দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা তিনি ঘোষণা করেননি। যদিও সেবারের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিলো তেলের সরবরাহে ঘাটতির কারণে; তথাপি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচাইতে বেশি তেল উৎপাদন করে এবং আমদানির চাইতে বেশি রপ্তানি করে। বিপুল মার্কিন ডাটা সেন্টার এবং বর্ধিত ইন্ডাস্ট্রির চাপে সামনের দিনগুলিতে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। তখন পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে চালু রাখার জন্যে পরিবেশ আইনগুলিকে বাইপাস করতে হতে পারে। এছাড়াও ট্রাম্প সর্বদাই কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমর্থক। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে যতো সময় লাগে, পরিবেশ আইনগুলিকে বাইপাস করতে পারলে সেই সময় অনেকটাই কমে আসতে পারে। ট্রাম্প চাইছেন যে, তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে তিনি দ্রব্যমূল্য অর্ধেকে নামিয়ে আনবেন। কিন্ত ২০২০ সালে করোনা লকডাউনের সময়েই মার্কিন নাগরিকদের জ্বালানি খরচ কমেছিল মাত্র ১৯ শতাংশ। বেশি উৎপাদন করলে কিছু সময়ের জন্যে তেলের মূল্য কমে আসতে পারে। কিন্তু দাম কমে গেলেই আবারও তেলের কোম্পানিগুলি উৎপাদন কমিয়ে ফেলতে চাইবে; তাতে মূল্য আবারও আগের স্থানে ফিরে যাবে। তেলের উৎপাদনকারীরা বরাবরই ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তারা তেলের মূল্য খুব বেশি কমাটা পছন্দ করবে না। আবার ট্রাম্প যদি তেল-গ্যাস রপ্তানি বৃদ্ধি করতে চান, তাহলেও মার্কিন নাগরিকদের জন্যে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যেতে পারে।

মেক্সিকো, পানামা খাল ও কানাডা

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক 'আটলান্টিক কাউন্সিল'এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ট্রাম্পের প্রথম দিনে বৈশ্বিকভাবে কি কি ব্যাপার আলোচনায় এসেছে। ট্রাম্প মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানার নিরাপত্তা শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি মেক্সিকোর সীমানায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং মেক্সিকোর মাদক ব্যবসায়ী চক্রকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়েছেন। এর ফলে ট্রাম্প স্বাভাবিকভাবে যতটুকু শক্তিসামর্থ্য সীমানায় মোতায়েন করতে পারতেন, তার চাইতেও অনেক বেশি সক্ষম হবেন। তবে এই সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়নে তার কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন হবে; যা তিনি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া পাবেন না।

ট্রাম্প পানামা খালের উপর যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র এত কষ্ট করে এই খাল তৈরি করেনি সেখানে চীনাদের প্রভাব বৃদ্ধির জন্যে। ট্রাম্প কিভাবে তার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করবেন তা নিশ্চিত নয়। 'আটলান্টিক কাউন্সিল' বলছে যে, পানামার বর্তমান সরকার যথেষ্টই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত; যা ট্রাম্পকে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা দেবে। ট্রাম্প আরও বলেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের উপর কর কমিয়ে আমদানিকৃত বিদেশী পণ্যের উপর শুল্ক দেবেন। তবে প্রথম দিনেই তিনি নির্দিষ্ট করে কোন শুল্পারোপ করেননি। কারণ তিনি জানেন যে, হঠাত করে শুল্কারোপ করলে শেয়ার বাজারে ধ্বস নামবে এবং যে দেশের পণ্যের উপর শুল্কারোপ করা হবে, সেই দেশ প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক দেবে। শেষ পর্যন্ত এই দ্বন্দ্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। তবে ট্রাম্প খুব শিগগিরই তার শুল্কের ঝুলি নিয়ে হাজির হবেন। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি ধারণা করছে যে, ট্রাম্প খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে চীনের ৫'শ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্প তার উদ্ভোধনী ভাষণেই বলেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আকার বৃদ্ধি করতে চান। ইতোমধ্যেই তিনি গ্রীনল্যান্ড কেনার কথা বলেছেন এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম প্রদেশ করার ইচ্ছা ব্যাক্ত করেছেন। ক্ষমতায় আসার আগেই ট্রাম্প কানাডার সরকারে পরিবর্তন এনেছেন। ‘বিবিসি' বলছে যে, ট্রাম্প যখন হুমকি দিয়েছিলেন যে, তিনি কানাডার পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন, তখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সেটার কোন জবাব দেননি। ট্রাম্পের হুমকিকে গুরুত্ব না দেয়ার জন্যে ট্রুডোর অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রীল্যান্ড ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পদত্যাগ করেন। এর ফলে ট্রুডো তার নিজ রাজনৈতিক দলের সমর্থন হারান এবং তার মেয়াদ শেষ হবার আগেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য

ট্রাম্প সরাসরি ইউক্রেন নিয়ে কোন কথা না বললেও উল্লেখ করেছেন যে, ট্রাম্পের আগের প্রশাসন অন্য দেশের সীমান্ত রক্ষায় সীমাহীন অর্থ ব্যয় করেছে। 'বিবিসি' বলছে যে, প্রথমদিকে ট্রাম্প ২৪ ঘন্টার মাঝে যুদ্ধ শেষ করার যে কথাগুলি বলেছিলেন, তা তার প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত লেঃ জেনারেল কীথ কেলগ ১০০ দিনে এনে দাঁড় করিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে আলোচনার টেবিলে বসলে ইউক্রেনকে দুর্বল অবস্থানে থেকেই আলোচনা করতে হবে। এই মুহুর্তে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূমি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর যেহেতু রাশিয়া এখন যুদ্ধে জয়ের ধারায় রয়েছে, সেহেতু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ বন্ধ করার তেমন ইচ্ছাও থাকার কথা নয়।

‘বিবিসি'র এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, ফিলিস্তিনে অস্ত্রবিরতি বাস্তবায়নে ট্রাম্প ক্রেডিট নিতেই পারেন। ক্ষমতায় আরোহণের আগেই তিনি এই কাজটা করে দেখিয়েছেন। আমেরিকা যে অস্ত্রবিরতি মেনে নেয়ার জন্যে ফিলিস্তিনিদের উপর চাপ প্রয়োগ করবে, সেটা সর্বদাই জানা ছিল। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন ইস্রাইলের উপর কোনরূপ চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে; যেকারণে ইস্রাইলিরা নানাভাবে টালবাহানা করে সিদ্ধান্ত দিতে দেরি করছিলো। ট্রাম্প ইস্রাইলিদের উপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কাজটা করে দেখিয়েছেন। 'বিবিসি' তার এক সূত্র থেকে বলছে যে, ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীরা ট্রাম্পের আসন্ন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গোপনে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, অর্থসচিব রেচেল রীভস, পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামি এবং ব্যবসা-বিষয়ক সচিব জনাথন রেইনল্ডস। ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন গবেষণাপত্র তৈরি করিয়েছে, যার মাধ্যমে ট্রাম্পের নীতিগত সম্ভাব্য সিদ্ধান্তগুলিকে বিশ্লেষণ করা ছাড়াও সেগুলিকে ব্রিটিশরা কিভাবে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা তার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্যের সাথে যায়। নিঃসন্দেহে ট্রাম্প চীনের দিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্যেই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধ চেয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের যে ইচ্ছা তিনি ব্যাক্ত করেছেন, সেটাও চীনকে মাথায় রেখেই। ট্রাম্প গ্রীনল্যান্ড এবং পানামা খালের নিয়ন্ত্রণও চাইছেন চীনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে। যখন ট্রাম্প বলছেন যে, তিনি মার্কিন জনগণের উপর কর কমিয়ে বিদেশী পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করতে চাইছেন, তখন যতগুলি দেশ এতে বিচলিত হবে, তার মাঝে শীর্ষে থাকবে চীন। ট্রাম্প নিঃসন্দেহেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধকে প্রধান এজেন্ডা হিসেবে নিয়ে আসবেন এবং আগে থেকেই চলে আসা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একে অপরের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ফেলার প্রসেসকে আরও এগিয়ে নেবেন। তথাপি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং আদর্শগত দ্বন্দ্ব যুক্তরাষ্ট্রকে সবচাইতে বেশি ব্যস্ত রাখবে। ডেমোক্র্যাটদের সাথে মারাত্মক দ্বন্দ্ব, লিবারাল আদর্শের ব্যাপারে মেরুকরণ (যেমন – সমকামিতা, গর্ভপাত, বিচার বিভাগের দলীয়করণ), সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক দৈন্যতা, জাতিগত দ্বন্দ্ব, অভিবাসী নিয়ে কোন্দল, বন্দুকের ব্যবহারে অপরাধ বৃদ্ধি, আত্মহননের হার বৃদ্ধি, গৃহহীন জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি, ইত্যাদি সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করেছে। ট্রাম্পের সময়ে এগুলি আরও একধাপ এগুবে। যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজের সাথেই যুদ্ধরত – ২০২৫ সালে এই সত্যটাই নতুনরূপে সামনে আসবে।

10 comments:

  1. তাহলে ত বাংলাদেশ বিশাল সংকটে পড়বে, কারণ IPS এর সামরিক জোটের কার্যক্রম বহুগুণে বাড়বে আর সেই টেনশন বাংলাদেশের উপর পড়বে, যেহেতু ট্রাম্প পুরোপুরি চাইনার দিকে ফোকাস দিতে চাচ্ছে, অলরেডি বাংলাদেশ যে আমেরিকান ব্লকে ডুকে গেছে তা নিশ্চিত বলা যায় কয়েকটি কারণ:-
    ১) এলএনজি আমদানি করে দেশের প্রাকৃতিক রিসোর্সগুলোকে ইজারা দেওয়া
    ২) IMF এর লোনের প্রেসক্রিশন অনুযায়ী ভ্যাট ও ট্যাক্স বৃদ্ধি
    ৩) FBI এর সাথে CTTC সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহযোগিতার অংশীদারত্ব.

    ২) বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক কিরূপ হতে পারে যেমন-JF 17 বিমান নিয়ে আলোচনা চলমান,ভারত ইতোমধ্যে নাক গলিয়েছে মানে পাকের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কতটুকু এলাউ করবে আমেরিকা??

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রথমতঃ বাংলাদেশ মারাত্মক সমস্যায় রয়েছে হাসিনা সরকারের আমল থেকেই। এই ব্লগের সাম্প্রতিক লেখাগুলি পড়লে এব্যাপারে একটা ধারণা পাবার কথা। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সামরিক দিক থেকে বাধা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাই তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে একটা সামরিক দ্বন্দ্ব আশা করা যেতেই পারে। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্কগুলি এখন ২০২৭-২৮এর কথা আলোচনায় নিয়ে আসছে।
      https://www.youtube.com/watch?v=y4lwtTLsSB8

      যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে যুদ্ধ শুরু করলে ভারতের উপর চাপ আসবে অরুণাচল প্রদেশে যুদ্ধ শুরু করার। তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে ট্রানজিট দেয়ার জন্যে বাংলাদেশের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে যুক্তরাষ্ট্র। একারণেই বাংলাদেশে নিজের সমর্থিত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ।

      যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাংলাদেশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। আইএমএফ-এর ঋণের শর্তগুলি হাসিনা আমল থেকেই বাস্তবায়িত হচ্ছিলো। যেকারণে
      ১ - জ্বালানির উপর থেকে ভর্তুকি তুলে দেয়া হচ্ছিলো (বিশেষ করে ডিজেল ও বিদ্যুৎ);
      ২- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর সরয়ারের নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগটাই ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো (যেমনটা পাকিস্তানে করা হয়েছে);
      ৩- ডলারের বিপরীতে টাকাকে ফ্রি-ফ্লোট করা শুরু হয়েছিলো (যেকারণে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ণ হয়েছে);
      ৪- বিভিন্ন সরকারি ইন্ডাস্ট্রি বেসরকারিকরণ করা হচ্ছিলো (যেমন পাট);
      ৫- বিদেশী বিনিয়োগ যেকোন সময় তুলে নিয়ে যাবার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টাও চলছিলো (যাকে বলে বাণিজ্য উদারীকরণ)।
      ৬- হাসিনা আমলেই মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশের মোট গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশের মালিক হয়েছে।
      ৭ - এছাড়াও হাসিনা আমলেই মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কাছে এলএনজি আমদানির জন্যে ফ্লোটিং এফএসআরইউ দিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এমনকি হাসিনা সরকারের খুব কাছের সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনালও এক্সিলারেট এনার্জি করে দিয়েছে এবং তারাই সেটা ম্যানেজ করার চুক্তি করেছে।
      ৮- হাসিনা সরকারের আমলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়। এখন সেই চুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে সেটাকে নির্ভরশীলতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে; যাতে করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এলএনজি-র একমাত্র সরবরাহকারী হতে পারে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের নীতিকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রভাবিত করতে সক্ষম হবে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এপ্রিল-মে মাসে যখন বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ হবে, তখন বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি এবং সেই এলএনজি কেনার জন্যে আইএমএফ-এর ঋণের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল থাকবে।

      বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পুরোপুরিভাবে জিম্মি হয়ে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের রপ্তানি পণ্যের উপর কর আরোপ করবে কিনা, সেব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে সর্বদাই হোয়াইট হাউজের দিকে চেয়ে থাকতে হবে এবং অনুরোধে ঢেঁকি গেলার কাজটাও করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চীনের উপর কতটা নির্ভরশীল থাকতে পারবে (বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে), সেটা যুক্তরাষ্ট্রের চাপের উপর নির্ভর করবে।

      বাংলাদেশের এই মুহুর্তেই 'জে-১০সি' এবং 'জেএফ-১৭' যুদ্ধবিমানের ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন। দুই বছরের মাঝে নয়; আজকেই প্রয়োজন! এটা এখন ততটাই জরুরি! এ নিয়ে এই ব্লগে লেখাও রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান অস্ত্র কেনাবেচা করতে পারবে না। আইএমএফ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ উভয় দেশকেই ঋণ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে - এটা কি অস্ত্র কেনাবেচার জন্যে?

      আপনি ঠিকই ধরেছেন - বাংলাদেশ মারাত্মক সংকটের মাঝে পড়েছে! এই ব্লগে আরও অনেক আগে থেকেই সাবধান করার চেষ্টা করা হয়েছে; হাসিনা আমল থেকেই বলা হচ্ছে - সামগ্রিক পরিবর্তন ছাড়া কোন পথই খোলা নেই!!

      Delete
    2. তাহলে আমেরিকা কি এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করবে অর্থাৎ IPS সম্প্রসারণ এবং একইসাথে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ!! আর এই কাজে সহযোগী হতে পারে ভারত, যদি এমনটা হয় বাংলাদেশ নেক্সট পাকিস্তানের মতো অবস্থা সৃষ্টি হবে অর্থাৎ আমেরিকা বাংলাদেশের বাণিজ্য, অর্থনীতি, কূটনীতি, বাজেট সম্পূর্ণরপে ম্যানিপুলেট করতে সক্ষম হবে??

      ২) নির্বাচনকে সামনে মাথায় রেখে যেই রাজনীতিক দল আসবে তাদের ভোট পাওয়া, ক্ষমতায় আসীন হওয়া, সক্ষমতা ও গতিবিধির কার্যক্রম কি আমেরিকাই ঠিক করে দিবে মানে এখন যে প্রভাব খাটাচ্ছে সামনে কি আরো জেকে বসবে? যদি বসে তাহলে বাংলাদেশের বিপদ আসন্ন বলা যায়??

      ৩) JF-17 বিমান ক্রয় নিয়ে যে ভারত যে হুমকি দামকি দিচ্ছে মনে হচ্ছে না বাংলাদেশ ডিলের দিকে আগাবে কারণ ভারত কোয়াডের সদস্য, আর এই বিমান পেয়ে গেলে যে ভারতের দিকে তাক করে রাখবে না এটার গেরান্টি কি!!
      আর বাংলাদেশের কারণে ভারতের কোনো এগজিস্টেন্সিয়াল ক্রাইসিসে পড়বে আমেরিকা কখনোই সহ্য করবে না,তাই আমরা দেখছি পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে নাক গলাই না এখন।।।

      Delete
    3. আইপিএস প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে চীনের বিরুদ্ধে থাকা দেশগুলির একটা কোয়ালিশন। আর তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কোয়ালিশন হলো বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা আদর্শকে টিকিয়ে রাখার জন্যে কোয়ালিশন। এই দেশগুলির সকল দেশ একভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করে না। যুক্তরাষ্ট্র চায় এই দেশগুলিকে যতটুকু সম্ভব তার পক্ষে কাজ করানো। আর কৌশলগত কারণে যে দেশগুলির গুরুত্ব বেশি, সেগুলির কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আশাও বেশি থাকে। আশা পূরণ না হলে চাপ প্রয়োগ তো রয়েছেই। এগুলি হলো যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য। তবে সকলকিছু যে লক্ষ্য অনুযায়ীই হবে, তা কিন্তু নয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় দুই দশক ধরে তথাকথিত ওয়ার অন টেরর চালাবার পর বুঝতে পেরেছে যে, সেটা ব্যাকফায়ার করেছে। এই সুযোগে চীন শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা রাশিয়াকে দুর্বল করতে গিয়ে আরও শক্তিশালী করে ফেলেছে। দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরের ক্ষেত্রে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পেয়াদা হলেও ভারত তার নিজের স্বার্থে বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছে। ভারত জানে যে, বাংলাদেশে বড় কোন পরিবর্তন হলে প্রথম বিপদে পড়বে ভারত; এমনকি তার অস্তিত্ব নিয়েও সংকটে পড়তে পারে। এটা নিয়ে এই ব্লগে লেখা রয়েছে। ভারত যে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন সিদ্ধান্তকেই মেনে নেবে, তা আশা করাটা ঠিক নয়। বিশেষ করে ভারতের বিজেপি সরকার এবং কংগ্রেস আমলে ভিত্তি পাওয়া ভারতের আমলাতন্ত্র এক সুরে গান গায় না। ওয়াশিংটন বিজেপিকে যতটা কাছের মনে করে, ব্রিটিশ চিন্তার ধারক ভারতের আমলাতন্ত্রকে ততটা কাছের মনে করে না। এই বাস্তবতাগুলি সর্বদাই থাকবে এবং একই কারণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিতে পার্থক্য থাকবেই; যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তারা ছাড় দিয়ে এক নীতিতে আশার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

      নির্বাচন এখনও অনেক দূরের বিষয়। বাংলাদেশে এখন এতগুলি গ্রুপ তৈরি হয়েছে যে, সেগুলির লক্ষ্যকে এক ছাতার নিচে এনে কাজ করানো কারুর পক্ষেই সহজ নয়। যারা ক্ষমতার কাছাকাছি রয়েছে, তারা এই গ্রুপিংকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করবে; এবং একইসাথে আসন্ন নির্বাচনের জন্যে প্রস্তুতি হিসেবে এমন প্রকৃতির সংস্কারকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে, যা কিনা বর্তমানে ক্ষমতার আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষমতাকে ভোটের মাধ্যমে জায়েজ করতে পারে। আর যারা দ্রুত নির্বাচন চাইছে, তারা বর্তমানে ক্ষমতার আশেপাশে থাকা ব্যাক্তিদের শক্তি খর্ব করার স্বপ্ন দেখছে। একারণেই সংস্কারের ব্যাপারে এই দুই গ্রুপের মাঝে সহমত নেই। এখানে যুক্তরাষ্ট্র চাইবে তার স্বার্থ বাস্তবায়নে যারা অগ্রগামী হবে, তাদেরকে ক্ষমতায় বসাতে। কিন্তু এক্ষেত্রে এদেশে ব্রিটিশ চিন্তার ধারকরা বড় রকমের বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে। কারণ এই গ্রুপ সকলের সাথে সুসম্পর্ক রাখার কথা বলে চীনের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইবে; যা কিনা মার্কিন-পন্থীরা যতদূর সম্ভব কমিয়ে ফেলতে সচেষ্ট হবে। মোটকথা এখানে ভূরাজনৈতিক স্বার্থের মারাত্মক দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।

      'জেএফ-১৭' যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ ব্যবহার করুক এটা যুক্তরাষ্ট্র চায় না। যেকোন দুই মুসলিম দেশের মাঝে কৌশলগত সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বিশেষ করে সেখানে যদি আঞ্চলিক স্বার্থ আরও বড় হয়। যেমন, তুরস্ক যখন পাকিস্তানের কাছে ৩০টা 'এ-১২৯ আতাক' হেলিকপ্টার বিক্রি করার চুক্তি করে, তখন যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেয়। তারা এই হেলিকপ্টারে ব্যবহৃত ইঞ্জিন (যার ৫০ শতাংশ মার্কিন) দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র জানে যে, এই হেলিকপ্টার মূলতঃ ভারতীয় ট্যাঙ্ক টার্গেট করে কেনা হচ্ছিলো। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্র বহু বছর পাকিস্তানের 'এফ-১৬' যুদ্ধবিমানের জন্যে আপগ্রেড আটকে রেখেছিলো। আর পাকিস্তানের 'এফ-১৬' যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপ করা বেশিরভাগ এডভান্সড অস্ত্র ব্যবহার করতে সক্ষম নয়। এগুলির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বিমান দিয়েছে; কিন্তু বিমানে ব্যবহার করার অস্ত্র দেয়নি। একারণেই পাকিস্তানকে 'জেএফ-১৭' ডেভেলপ করতে হয়েছে। আর এতে চীন সর্বোচ্চ সহায়তা দিয়েছে। এই বিমানের বেশিরভাগ কম্পোনেন্ট চীনের ডেভেলপ করা। প্রথমদিকের সকল বিমানের ইঞ্জিন ছিল রাশিয়ান (মিগ-২৯-এর ইঞ্জিন)। আর এই বিমানে কোন পশ্চিমা কম্পোনেন্ট নেই; যা দিয়ে এই বিমানের ব্যবহারকে সীমিত করা যায়। অর্থাৎ মার্কিন ফরেন পলিসি এই বিমানের উপর খাটে না। একারণে এই বিমান কার কার কাছে পাকিস্তান বিক্রি করতে পারবে, সেটা যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে পাকিস্তানের সরকার এবং সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই মুসলিম দেশগুলির মাঝে কাছের সম্পর্ক দেখতে চায় না। কারণ তখন এই দেশগুলির একটাতে যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাইরে বড় কোন রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে যায়, তাহলে বাকিগুলিতে সেই একই পরিবর্তন হতে একদিনও লাগবে না।

      Delete
    4. আমি ভূ-রাজনীতি সম্পর্কে যতটুকু বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারলাম যে, সিরিয়ার বাসার আল আসাদকে টিকে রাখতে যেখানে মার্কিন, রাশিয়া,ইরান,তুরস্ক, ন্যাটোকে একএে একটা লক্ষ্যে টানতে গেলে বলবো ভিন্ন শক্তিশালী আদর্শকে রুখে দেওয়া, একইভাবে ইসরাইলকে সহযোগীতা করে আসছে। যে মার্কিন রাশিয়া,ইরান এর সাথে প্রতিনিয়ত কোনো ইস্যু কে কেন্দ্র করে যে পরিমাণ ক্লাশ সৃষ্টি হয়, সিরিয়াতে ঠিক ততটুকু বন্ধুরূপে সাহায্য করেছে। ব্যাপারটা এমন যে, যে আমার শএু সে ক্ষেএবিশেষে বন্ধু হয়ে যাচ্ছে, টার্গেট পূরণ হয়ে গেলে আবার শএুতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ভূ-রাজনীতি বিষয়টা এই ক্ষেএে অনেক জটিল আবার আদর্শকে টেনে আনলে অনেকটা সরল মনে হয়...

      Delete
    5. চীনকে কনটেইন করার লক্ষ্যে শুধু IPS কথা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার পাশাপাশি নতুন পলিটিকাল আদর্শ যাতে রাইস করতে না পারে সেদিকেও মার্কিনিদের লক্ষ্য থাকবে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা থাকবে। যেহেতু বাংলাদেশে একটা পসিবিলিটি আছে নতুন আদর্শ রাইজ করার। তাই দেখলাম FBI এর সাথে CTTC এর সহযোগীতার অংশীদারত্ব।

      Delete
    6. প্রকৃতপক্ষে চীনকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য বিপরীত আদর্শকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য থেকে ভিন্ন নয়। এটা হান্টিংটনের 'ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশনস' থেকে ভালোই বুঝতে পারা যায়। হান্টিংটন সরাসরিই বলেছেন যে, সমাজতন্ত্রের পতনের পর পশ্চিমা আদর্শের জন্যে পরবর্তী হুমকি হলো ইসলাম। সেই হিসেবে দুনিয়ার কোন দেশ এবং জাতি আসন্ন এই দ্বন্দ্বে কোন পক্ষে থাকবে, সেটা তিনি দেখিয়েছেন। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, ঐতিহাসিক বাস্তবতা এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরকে ধরলে এটা বলা যায় যে, পশ্চিমাদের সাথে ইসলামের আসন্ন দ্বন্দ্বে চীনারা ইসলামের পক্ষাবলম্বণ করবে। একারণে তিনি পশ্চিমাদের জন্যে করণীয় হিসেবে বলেছিলেন - "to restrain the development of the conventional and unconventional military power of Islamic and Sinic countries"। এটা তিনি লিখেছেন ১৯৯৬ সালে। আর এই লেখার জন্যে তিনি পশ্চিমা সকল থিঙ্কট্যাঙ্কের কাছ থেকে এগ্রিমেন্ট নিয়েছেন। অর্থাৎ এই লেখাগুলি শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত মতামত নয়। এই লেখাগুলির উপর ভিত্তি করেই যুক্তরাষ্ট্র প্রায় দুই দশক ধরে তথাকথিত ওয়ার অন টেরর পরিচালনা করেছে এবং পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এর মাঝে চীনের সামরিক শক্তির আবির্ভাব হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র আটকাতে পারেনি। এখন যুক্তরাষ্ট্র চিন্তা করছে যে, চীন যদি তার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এবং প্রযুক্তি দিয়ে পশ্চিমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আদর্শিক শক্তিকে সহায়তা করে, তাহলে পশ্চিমাদের সামরিক নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এখন লক্ষ্য একটাই - পশ্চিমা আদর্শকে রক্ষায় শেষ প্রচেষ্টাটুকু চালিয়ে নেয়া।

      কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে সমস্যা হলো, সারা বিশ্বে পশ্চিমা আদর্শকে ঠেকনা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থনীতি এবং সমাজব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে। আর এর ফলশ্রুতিতে মারাত্মক রাজনৈতিক মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। একদল এলজিবিটি ইত্যাদির মাধ্যমে পশ্চিমা আদর্শের ঝান্ডাকে বহণ করতে চাইছে; আরেকদল 'আমেরিকা ফার্স্ট' নামে জাতীয়তাবাদী চিন্তা বাস্তবায়ন করতে চাইছে।

      Delete
    7. সিরিয়া নিয়ে যেটা বলেছেন - এগুলি সেকুলার রাষ্ট্রগুলির স্বার্থের বন্ধন। এগুলি আদর্শিক কোন বন্ধন নয়। একাণেই কিছুদিন তারা এক লক্ষ্যে কাজ করে; কিছুদিন পরেই দ্বন্দ্ব শুধু করে। আর সর্বদাই তার একে অপরকে অবিশ্বাস করে। এই বন্ধুত্ব বা এলাইনমেন্ট হলো মাকড়সার জালের মতো।

      Delete
  2. সামগ্রিক পরিবর্তন বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্যবস্থাগত আদর্শিক পরিবর্তন; শুধুমাত্র ব্যক্তি বা দলের পরিবর্তন নয়। এটা পশ্চিমা বিশ্বের ভয়ের কারণ। আর ঠিক এটাই স্যামুয়েল হান্টিংটন তার 'ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন' বইতে তুলে ধরেছিলেন। পশ্চিমারা জানে যে এটা অবশ্যম্ভাবী। তারা এটা জেনেই সেটাকে পেছাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তথাকথিত ওয়ার অন টেরর এবং চীনকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাটা এই কৌশলেরই অংশ।

      এব্যাপারে এই ব্লগে অনেক লেখা রয়েছে। হান্টিংটনের বইটাও পড়তে পারেন। ইংরেজিটা পড়বেন; বাংলা ভার্সনে কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দকে বিকৃত করে অর্থ পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে।

      Delete