বাংলাদেশে উগ্রপন্থী হিন্দু সংগঠন 'ইসকন'এর কর্মকান্ড এবং এর নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ও দেশদ্রোহীতার মামলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক নিয়ে আরেক দফা আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৫ই অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বিশেষ করে ভারতের মাটিতে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় প্রদানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী চিন্তাটা শক্তিশালী হচ্ছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি টালমাটাল হবার পেছনে অনেকেই ভারতের ইন্ধনকেই দায়ী করছিলেন। তবে এর মাঝে 'ইসকন'এর ব্যাপারটা সামনে চলে আসার পর উগ্রবাদী হিন্দুদের নিয়ে আলোচনা প্রবল হয়েছে; কারণ ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসরত হিন্দুদের ব্যাপারে বক্তব্য দিচ্ছে; যা কিনা কিনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের শামিল। বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের শংকার মূল কারণটা বের করতে হলে ভারতীয় চিন্তাবিদেরা কোন ব্যাপারটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তাদের মিডিয়া পুরো ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
ভারতীয় কূটনীতিবিদ হর্ষবর্ধন শ্রিংলা 'এনডিটিভি'র সাথে এক সাক্ষাতে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মূল শংকাটা তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, ভারত বাংলাদেশের সেকুলার সংবিধানের অবমাননা অবলোকন করে শংকিত হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যারা সুবিধা পেয়েছে, তাদের মাঝে রয়েছে বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল; যারা বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সমাজের সাথে অনেকদিন থেকেই জড়িত। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে জামাত-এ ইসলামী ছাড়াও হিযবুত তাহরীর, জামাতে মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হিযবুল আনসার (সম্ভবতঃ তিনি আনসারউল্লাহ বাংলা টীম বা এবিটিকে বুঝিয়েছেন), ইত্যাদি দল রয়েছে; যারা বাংলাদেশে একটা খিলাফত প্রতিষ্ঠার সুযোগ খুঁজছে। তিনি বলেন যে, এই শক্তিগুলি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে চলে যাচ্ছে। মোহাম্মদ ইউনুসের সরকার প্রচেষ্টা চালালেও এই ইসলামিক দলগুলি আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া শূণ্যস্থানগুলি পূরণ করছে এবং তারা অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট প্রভাবশালী। এই অবস্থানগুলিতে থেকে তারা মিডিয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে প্রভাবিত করা ছাড়াও যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদেরকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশে ৫ই অগাস্টের পরিবর্তনের পর ভারতের মূল চিন্তা ছিল দু'টা। প্রথমতঃ সীমানা পেরিয়ে ভারতে যেন কোন প্রকারের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ না হয়; বিশেষ করে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের 'সেভেন সিস্টার্স' বলে পরিচিত রাজ্যগুলিতে। আর দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যেন কোন প্রকারের অত্যাচার না হয়, যা নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে ভারতের কথা বলতে হয়। এই দু'টা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যদি শক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভারতের দিক থেকে বিবৃতি আসতে থাকবে এবং ভারত অগ্রগামী হয়ে সিদ্ধান্ত নেবে; কারণ এটা ভারতের জন্যে একটা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি। আর এই ব্যাপারগুলির সমাধান না হলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যথেষ্টা অবনতি হতে পারে।
শ্রিংলার বক্তব্যে কয়েকটা ইসলামি সংগঠনের নাম আসলেও মূলতঃ জামাত-এ-ইসলামী, জেএমবি এবং এবিটির নাম তিনি উল্লেখ করেছেন সীমান্ত পেরিয়ে কার্যকলাপ এবং 'সেভেন সিস্টার্স'এর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে। আর হিযবুত তাহরীরএর নাম তিনি বলেছেন বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার শংকা থেকে। গত ১০ই অক্টোবর ভারত সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিকে উল্লেখ করে 'দ্যা হিন্দু' পত্রিকার এক খবরে বলা হয় যে, নিষিদ্ধ ঘোষণার মূল কারণ হলো, হিযবুত তাহরীর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উৎখাত করে ভারতসহ সারা বিশ্বে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়; যা কিনা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। ৫ই অগাস্টের পরিবর্তনের সাথেসাথেই বাংলাদেশের রাস্তায় হিযবুত তাহরীরের মিছিল দেখে ভারতীয় চিন্তাবিদেরা এবং মিডিয়া বিচলিত হয়ে পড়ে। ৯ই অগাস্ট ঢাকার বাইতুল মুকাররম মসজিদে হিযবুত তাহরীরের বিশাল মিছিলকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মিডিয়া 'অপইন্ডিয়া' বিশদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, হিযবুত তাহরীর বলছে যে, দেশের সকল সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এবং শুধুমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই সত্যিকারের সুবিচার এবং কল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম। একইসাথে তারা বিদেশী কোম্পানিগুলিকে বের করে দেয়ার কথা বলে এবং অমুসলিম দেশগুলির সাথে সমস্ত কৌশলগত চুক্তি বাতিল করার কথা বলে। 'অপইন্ডিয়া' হিযবুত তাহরীরের পোস্টারে সূরা মায়িদার ৪৫ নম্বর আয়াতের কথা উল্লেখ করে, যেখানে বলা হয়েছে যে, ‘যারা আল্লাহর আইন দ্বারা বিচার ফয়সালা করেনা, তারা জালিম'। সেখানে পোস্টারের উল্লেখ করে বলা হয় যে, হিযবুত তাহরীর সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদেরকে আহ্বান জানাচ্ছিল যাতে করে তারা সরকারকে উৎখাত করে হিযবুত তাহরীরের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। অগাস্ট মাসে ভারতের 'দ্যা নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' হিযবুত তাহরীরএর উপর এক প্রতিবেদনে শংকা প্রকাশ করে বলে যে, নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও তারা যে ঢাকা এবং অন্যান্য স্থানে মিছিল করতে পারছে এবং পোস্টার লাগাতে পারছে, তা ভারতের জন্যে বিরাট শংকার ব্যাপার। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, এই সংস্থাটির শক্ত অবস্থান রয়েছে শিক্ষিত জনগণের মাঝে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর মাঝে তাদের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে। আর যেহেতু তারা সেকুলার গণতন্ত্রের বিরোধী, তাই সেটা যথেষ্টা চিন্তার বিষয়।
ভারতীয় সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর ভারতীয় মিডিয়া 'ফার্স্ট পোস্ট'এর এক লেখায় কোলকাতার 'সেন্ট জেভিয়ার কলেজ’এর শিক্ষক সায়ান্তান ঘোষ বলেন যে, নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারটা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার ইস্যুকে হাইলাইট করছে এবং বলে দিচ্ছে যে, ভারত সরকার হিযবুত তাহরীরের ব্যাপারে কতটা শংকার মাঝে রয়েছে। সায়ান্তান ঘোষ বলছেন যে, হিযবুত তাহরীরের সরাসরি কর্মকান্ড ছাড়াও ঢাকার রাস্তায় সবচাইতে প্রসিদ্ধ স্কুলগুলির ছাত্রদের মিছিল ছিল উল্লেখ করার মতো; যেখানে তারা কলেমা খচিত কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করে এবং খিলাফতের দাবিতে স্লোগান দেয়। এর অর্থ হলো দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিযবুত তাহরীর শক্ত অবস্থান নিয়েছে এবং এই প্রতিষ্টানগুলির ছাত্রদেরকে তারা রাস্তায় নামাতে সক্ষম। লেখায় বলা হয় যে, ১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার কর্মকান্ড অহিংস হলেও এর মূল লক্ষ্য হলো সেকুলার গণতান্ত্রিক সরকারগুলিকে উৎখাত করা, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সরিয়ে দেয়া এবং একটা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্বের বিরোধী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলার সমাজের প্রতি হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৯ সালে সংস্থাটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও সংস্থাটি তাদের কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করতে পেরেছে; বিশেষ করে রাজনৈতিক অত্যাচারের শিকার জনগণকে তারা তাদের পক্ষে নিয়ে এসেছে এবং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে হতাশ জনগোষ্ঠীকে তারা আলিঙ্গন করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে; যেমন – প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে, সরকার-বিরোধী লিফলেট ছড়িয়েছে, এমনকি কলেমা-খচিত কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেছে। সায়ান্তান ঘোষ আরও বলছেন যে, হিযবুত তাহরীরের সবচাইতে শংকার দিক হলো তারা শিক্ষিত তরুণদেরকে তাদের দলে ভেড়াচ্ছে। তারা বেকারত্ব, রাজনৈতিক দূর্নীতি, এবং স্থবির সমাজের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবকদের নিজেদের পতাকাতলে নিয়ে এসেছে। সংস্থাটি এই যুবকদেরকে বিশ্ব সম্পর্কে একটা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিচ্ছে; যার মূলে রয়েছে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান। শিক্ষিত সমাজকে নিজেদের দলে নিয়ে আসতে পারার ব্যাপারটাই হিযবুত তাহরীরকে জামাত-এ-ইসলামীর মতো সংস্থাগুলি থেকে আলাদা করেছে। কারণ তারা বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে; যা প্রতিহত করাটা অনেক বেশি কঠিন। শুধু তা-ই নয়, তাদের চিন্তাগত কর্মকান্ডগুলি ক্ল্যাসিক ইসলামিক নেটওয়ার্কেরও (আলেম-ওলামা) বাইরে; একেবারে সমাজের প্রধান ধারার মানুষদের মাঝে; যা কিনা ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির সবচাইতে বড় চিন্তার কারণ।
হিযবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে ইউনুস সরকারের প্রতি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার আহ্বান জানানো হলে গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্যা ইকনমিক টাইমস'এর এক প্রতিবেদনে ভারতের দুশ্চিন্তার কথা তুলে ধরা হয়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জামাত-এ-ইসলামীর উপর থেকে আওয়ামী লীগের দেয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে; কাজেই একই সূত্রে হিযবুত তাহরীরএর উপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া উচিৎ। তবে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও যে ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে না, তা সরকারের উপদেষ্টাদের বিবৃতিতে পরিষ্কার। সরকার হিযবুত তাহরীরের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়া ছাড়াও সংস্থাটির মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিমকে ৪ঠা অক্টোবর গ্রেপ্তার করে ভারতের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু চিন্ময় ইস্যুকে কেন্দ্র করে দিল্লী সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় ভারতীয় মিডিয়া যখন উগ্রপন্থী হিন্দু জনগোষ্ঠীকে খেপিয়ে তুলে, তখন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব আরও একধাপ এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের সেকুলার গ্রুপগুলিই এখন ভারত থেকে 'সেভেন সিস্টার্স' রাজ্যগুলিকে আলাদা করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বিএনপির মতো সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলি এবং জামাত-এ-ইসলামীর মতো ইসলামী দলগুলি এক্ষেত্রে জনগণের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাচ্ছে।
৫ই অগাস্টে বাংলাদেশের পট পরিবর্তন ভারতের জন্যে হুমকি-রূপে আবির্ভূত হয়েছে। জামাত-এ-ইসলামীর মতো সংগঠনের সমর্থকেরা সরকারের আশেপাশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকাকে ভারত যত বড় হুমকি হিসেবে দেখছে, তার চাইতে বহুগুণে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের শিক্ষিত 'এলিট' সমাজের যুবকদের মাঝে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের রক্ষাকারী সেনাবাহিনীর অফিসারদের মাঝে হিযবুত তাহরীরের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিকে। হর্ষবর্ধন শ্রিংলার কথায় এটা পরিষ্কার যে, ঢাকায় খিলাফত প্রতিষ্ঠার ডাক ভারতের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব জেগে ওঠার সাথেসাথে ঢাকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুলের ছাত্রদের কলেমা-খচিত পতাকা নিয়ে ঢাকার রাস্তায় মিছিল ভারতকে মারাত্মকভাবে বিচলিত করেছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যখন টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে, তখন হিযবুত তাহরীর সারা দেশে পোস্টার এবং লিফলেট বিলি করে গত ২৯শে নভেম্বর এক অনলাইন কনফারেন্সের আয়োজন করে; যেখানে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান নিয়ে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রস্তাব করা হয়। এটা পরিষ্কার যে, ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত সেকুলার গণতন্ত্রকে রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদে কোন ফলাফল বয়ে নিয়ে আসেনি। আর ২০২৪ সালে ভারতে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং 'ইসকন'সহ নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ দিল্লীর অস্তিত্ব হারাবার শংকাকেই তুলে ধরে।
এটা কি সম্ভব যে আমি রাতে ঘুমিয়েছি সকালে উঠে ফেসবুক খুলে দেখতে পেলাম সেনাবাহিনী সামরিক কূ্্য করে খিলাফত ঘোষণা করেছে।
ReplyDeleteঅথবা বিদ্যমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হতে পারে?
ভারতের জন্য হুমকি এমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা বাংলাদেশে ভারত প্রতিষ্ঠা হতে কেন দিবে? শুধু ভারত না বৃটেন আমেরিকা সবাই একসাথে তো ঝাঁপিয়ে পড়বে খিলাফত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কেননা খিলাফত তো গনতন্ত্রবিরোধী মতবাদ।এত গুলো পরাশক্তিকে বাংলাদেশের নব্য প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্র অন্যান্য মুসলিম দেশ খিলাফতের সাথে একীভূত হবার আগে কিভাবে মোকাবেলা করবে?
প্রথমতঃ শেখ হাসিনাকে সরাবার ব্যাপারেও অনেকেই ভেবেছিল যে সেটা কতটা বাস্তব। কারণ আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে ছিল। কিন্তু এরপরেও মানুষ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল। তারা যদি মনে করতো যে এটা কোনদিনও হবার সম্ভাবনা নেই; তাই রাস্তায় নেমে লাভ নাই, তাহলে হাসিনার পতন হতো না।
Deleteদ্বিতীয়তঃ আমরা ভবিষ্যৎ জানি না। কিন্তু ভবিষ্যতে কি হতে পারে সেটার উপর ভিত্তি করে বহু কাজ করি। অথচ কিছু সিলেকটিভ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের 'ভয়ে' আমরা এগুতে চাই না।
তৃতীয়তঃ খিলাফত ঘোষণা করার কাজ তো সেনাবাহিনীর নয়। হিযবুত তাহরীরএর প্রিন্সিপল অনুযায়ী সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোন কার্যপদ্ধতি (যেমন লেনিন-মাওএর গণ আন্দোলন) হিযবুত তাহরীর গত সাত দশকে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে বলে কোন প্রমাণ এখনও কেউ দিতে পারেনি।
চতুর্থতঃ ভারত বাংলাদেশে চীনা সহায়তায় সাবমেরিন ঘাঁটি, মিসাইল ওভারহল ফ্যাসিলিটি, স্যাটেলাইট গাইডেড বম্ব এসেম্বলি ফ্যাসিলিটি হতে দিয়েছে। তুরস্কের সহায়তায় বাংলাদেশে আর্টিলারি প্ল্যান্ট এবং লেজার গাইডেড বম্বএর এসেম্বলি প্ল্যান্ট হতে দিয়েছে। ১২০কিঃমিঃ রেঞ্জের ব্যালিস্টিক রকেটও বাংলাদেশকে পেতে দিয়েছে। এর অর্থ হলো ভারত তো পালনকর্তা নয়; যুক্তরাষ্ট্রও নয়। তাদের প্রভাব রয়েছে; কিন্তু এর অর্থ এ-ই নয় যে, সকলের পেটের ভেতরে কি আছে সেটাও সে জেনে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি এতটাই শক্তিশালী হতো, তাহলে কেন তারা রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে হারাতে ব্যর্থ হলো? কেন তারা আফগানিস্তান থেকে লেজ গুটিয়ে পালালো? কেন তারা ভিয়েতনামে ৫৮ হাজার সেনা হারিয়েও জিততে পারলো না? কেন তারা উত্তর কোরিয়ার মতো পুঁচকে দেশকে হারাতে পারলো না? কেন তারা এত বছরেও কিউবার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি? কেন তারা ভেনিজুয়েলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ? এখানে চীনের কথা উল্লেখই করা হয়নি! এতগুলি উদাহরণ থাকার পরেও কেন আমাদের মনে হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র সর্বশক্তিমান? যে দেশ তার নিজের দেশের সব মানুষকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা আরেকটা আদর্শিক রাষ্ট্রকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে?
আলোচনারা সারসংক্ষেপ হলো, কোন কিছুই অসম্ভব নয়। সেটা ভারতও জানে। জানে বলেই তারা ভীত। তারা জানে যে ঢাকায় খিলাফত প্রতিষ্ঠার অর্থ হলো ভারতের অস্তিত্ব হারানোটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র!
সেনাবাহিনীর মধ্যে কি হিজব থেকে বিএনপি আলীগএর জনপ্রিয়তা বেশি নয়??
Deleteতাহলে তো এই সেনাবাহিনীর হাসিনাকে সরাবার কথা নয়; তাই না?
Deleteযদি মনে করি খিলাফাহ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো,তারপরের স্টেপ কি হবে মানে ধরেন কোনে একটি রাষ্ট্রে অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, টালমাটাল ও ভঙ্গুর অর্থনীতি।যদি এসব দেশগুলোর যেকোনো একটিতে খিলাফাহ চলে আসলে,তখন মার্কিনরা স্যাংশন দিয়ে বারোটা বাজানোর চেষ্টা করবে না এবং এখানে বোমবিং করার সম্ভাবনা কি উড়িয়ে দেওয়া যায়,গৃহযুদ্ধ কি লেগে যেতে পারে না, স্যাংশনে খাদ্য অভাবে মারা যাবে নয় কি???
ReplyDeleteতখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ও আশেপাশের দেশগুলো পশ্চিমাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না,তখন নব্য খিলাফাহ রাষ্ট্র ট্যাকেল দিতে কি সক্ষম হবে??
আর যদি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা হয়েই যাই,তাহলে পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশনে চলা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কিভাবে একএিত করবে??
যেহেতু এটা নতুন একটি সিস্টেম হবে,এগুলা মেইনটেইন করতে ত মিনিমাম সময় লাগবে, তাহলে ওই সময়গুলোকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইবে পশ্চিমারা, তখন তার প্রেক্ষাপটটা কিভাবে দাড়াবে, আশা করি বোঝার সুবিধার্থে ডিপ বিশ্লেষণ করবেন??
প্রতিটা আদর্শিক মুভমেন্টের কিছু ধরণ থাকে; আর প্রতিটা আদর্শের কিছু প্রিন্সিপল বা মূলনীতি থাকে। সেই ধরণগুলি এবং মূলনীতিগুলি বুঝতে পারলে সেই আদর্শের উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া রাষ্ট্র কেমন হবে, তার একটা ধারণা পাওয়া যায়।
Deleteপ্রথমতঃ যেকোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন জনসমর্থন। কোন প্রকারের জনসমর্থন ছাড়া কোন নতুন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। আর জনসমর্থন থাকলে সেই দেশের ব্যবস্থাপনা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়; মানুষ অধৈর্য্য না হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করে। কারণ কিছু সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব; আর কিছু সমস্যা সমাধান করতে সময় লাগবে। যেমন, দ্রব্যমূল্য সমস্যা প্রায় রাতারাতিই সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু এতকাল ধরে ক্যাপিটালিস্ট ব্যবস্থায় মানুষের জমিজমার যে বিরোধ রয়েছে, সেগুলি সমাধান করতে কিছু সময় অবশ্যই লাগবে।
দ্বিতীয়তঃ এরূপ আদর্শিক রাষ্ট্রে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলির কোন দূতাবাস বা এনজিও থাকবে না; এটা নিশ্চিত। কাজেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাবভার্সন সম্ভব নয়। এতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাজনিত সমস্যাগুলি অনেকটাই থাকবে না।
তৃতীয়তঃ এরূপ রাষ্ট্রের কাঠামো ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্রের মতো নয়। যেমন, ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্র হলো ঋণ-নির্ভর; কারণ সেখানে যেকোন মূল্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতিই হলো মূল লক্ষ্য। তাই ঋণ নিয়ে হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকল্প নেয়া হয়। সেসব প্রকল্পের মূল বেনেফিশিয়ারি অবশ্য হাতে গোণা কিছু ব্যক্তিই হয়; বাকিরা গরীব থেকে যায় এবং কিছুদিন পরপর বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নামে। ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্রের কাঠামোগত সমস্যাগুলি খিলাফা রাষ্ট্রে থাকবে না। যেমন, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ থাকবে প্রধান লক্ষ্য; তাই বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক দুর্ভোগ দূর হবে; আর্থিক দৈন্যতার কারণে অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও বর্তমানের ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্রের অর্থনীতি মূলতঃ আমদানি-রপ্তানি নির্ভর। এটা ইসলামিক অর্থনীতি সমর্থন করে না। আমদানি-রপ্তানি সমস্যা নয়; তবে এগুলির উপর নির্ভর করে অর্থনীতি ডেভেলপ করাটা সমস্যার। কারণ এতে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। খিলাফা রাষ্ট্র বাই ডেফিনিশন অন্য রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হতে পারবে না; বা অন্য কথায় বলতে গেলে মূল ক্ষেত্রগুলিতে স্বনির্ভর হবে। কাজেই অর্থনৈতিক অবরোধ এখানে কাজ করবে না।
চতুর্থতঃ ভূরাজনৈতিক দিক থেকে খিলাফা রাষ্ট্রকে বাংলাদেশ বা ভারত বা পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা যাবে না। খিলাফা রাষ্ট্র হলো আদর্শিক রাষ্ট্র; ক্যাপিটালিস্ট এবং কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের মতোই - শুধু আদর্শ আলাদা। আদর্শিক রাষ্ট্র হয় "প্রো-একটিভ"; আর জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র হয় "রি-একটিভ"। এখানেই একটা আদর্শিক রাষ্ট্র অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে অনেক এগিয়ে থাকে। কারণ এই রাষ্ট্র বেশিরভাগ সমস্যাই রাজনৈতিকভাবে হ্যান্ডেল করতে সক্ষম - বাকিদেরকে "রি-একটিভ" বানিয়ে ফেলে। অর্থাৎ অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি চেয়ে থাকবে যে খিলাফা রাষ্ট্র কি করে; তারা সেটা দেখে এরপর নিজেদের একশন ঠিক করবে। এভাবে একটা আদর্শিক রাষ্ট্র বাকিদের একশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঠিক যেমনটা আজকের দিকে আমেরিকা এবং ব্রিটেন পারে; কিন্তু রাশিয়া এবং চীন পারে না।
উপরের কমেন্টের বাকিটা -
Deleteপঞ্চমতঃ একটা আদর্শিক রাষ্ট্রের শক্তি অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি অনুভব করে এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান ঠিক করে; ঠিক যেমনটা আমরা দেখেছিলাম গত ঠান্ডা যুদ্ধের সময়। বহু দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে বন্ধুত্ব করেছিল; অনেকেই তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলেছিল; অনেকেই তাদের থেকে পণ্য এবং অস্ত্রও কিনেছিল। কারণ সকলেই এই সম্পর্কের মাঝে বেনেফিট দেখতে পেয়েছিল। এই ব্যাপারটা খিলাফা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অনেক রাষ্ট্রই খিলাফা রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য করবে। এখানে একটা বড় ব্যাপার হবে খিলাফা রাষ্ট্রের গোল্ড-বেইজড কারেন্সি। এই কারেন্সিতে কোন মুদ্রাস্ফীতি নেই। সুতরাং যেকোন রাষ্ট্র এই কারেন্সিতে বাণিজ্য করে সুবিধা পাবে। এছাড়াও এই রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন ব্যাংক-গ্যারান্টির (এলসি) প্রয়োজন হবে না। কারণ রাষ্ট্রই এখানে গ্যারান্টর হবে; যেটা রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর পরের খিলাফার সময় আমরা দেখেছি। এই রাষ্ট্রের এক ব্যক্তির হাতে লেখা একটা কাগজকে চীনারা ব্যাংক গ্যারান্টির চাইতে বেশি মূল্য দিতো। দেখা যেতো যে এই একজনের লেখা একটা কাগজ একজনের হাত থেকে অন্য জনের হাতে ঘুরছে কয়েক বছর ধরে - কেউ এটাকে ক্যাশ করার দরকার মনে করে নাই। এটা হলো সেই রাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং শক্তির একটা উদাহরণ।
ষষ্ঠতঃ এটা নিশ্চিত যে, বাই ডেফিনিশন খিলাফা রাষ্ট্র ব্রিটিশ সিস্টেমে আঁকা সকল আন্তর্জাতিক সীমানাকে অসন্মান করবে। যেহেতু এই মুভমেন্ট সকল মুসলিম দেশেই হচ্ছে, তাই এক দেশে সফল হলে সেটা অন্যান্য দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করবে খিলাফা রাষ্ট্রের সাথে একত্রিত হয়ে যাবার জন্যে। এই ব্যাপারটা মার্কিনীরা খুব ভালোভাবেই জানে। একারণেই মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত খিলাফত রাষ্ট্রের কথা বিভিন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং রাষ্ট্রের লোকজন বারংবারই উল্লেখ করেছেন। পশ্চিমারাও তাদের তৈরি করা সেকুলার রাষ্ট্রের সীমানার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শংকিত।
সপ্তমতঃ যেকোন ব্যাপারই বাস্তবায়িত হতে সময় লাগে। ব্রিটেনের সুপারপাওয়ার হতে এক'শ বছরের বেশি সময় কষ্ট করতে হয়েছে; আমেরিকার লেগেছে ১৭০ বছর! সোভিয়েত ইউনিয়নের লেগেছে অবশ্য মাত্র ৩০ বছর; যদিও তারা অনেক দুর্বল সুপারপাওয়ার বা চ্যালেঞ্জার ছিল; কারণ তারা দুনিয়ার ব্যবস্থাটাকে পরিবর্তন করতে পারেনি। ব্রিটেন সুপারপাওয়ার সময় হল্যান্ড, স্পেন এবং ফ্রান্সকে টেক্কা দিতে হয়েছে। আমেরিকাকে টেক্কা দিতে হয়েছে ব্রিটেনকে; যদিও জার্মানি অর্ধেক কাজটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে করে দিয়েছিল। এর আগের রাসূল (সাঃ)এর প্রতিষ্ঠা করা প্রথম খিলাফা রাষ্ট্রকে টেক্কা দিতে হয়েছে পারস্য ও বাইজ্যান্টাইন (ইস্টার্ন রোমান) সাম্রাজ্যকে। এই ব্যাপারগুলি থাকবেই; রাতারাতি কোনকিছুই ঘটে না।
বর্তমান সরকারের হিজবুত তাহরীরের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা কতোটুক?
ReplyDeleteএটা হবার সম্ভাবনা খুবই কম; বরং উল্টোটা হবার সম্ভাবনা বেশি। অর্থাৎ নতুন করে ধরপাকড় শুরু হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে সরকারের উপরে চাপ রয়েছে। বিদেশীদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইবে না এই সরকার। হাসিনা সরকার একসময় হিযবুত তাহরীরএর সদস্যদের উপর ব্যাপক অত্যাচার চালিয়েছিল; অনেককে আয়নাঘরে আটকে রেখেছিল মাসের পর মাস। এখন সেই আয়নাঘর আবারও নিয়ে আসা হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ভারতকে খুশি করার জন্যে সরকার কিছুটা হলেও ধরপাকড় শুরু করতে পারে। সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃবৃন্দ এক্ষেত্রে সরকারকে সমর্থন দেবে।
Deleteতবে সরকারের বর্তমান বাস্তবতা হলো আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক দুর্বলতা। এহেন দুর্বলতার মাঝে সরকার যদি হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে লেগে যায়, তাহলে সেটা ম্যানেজ করা সরকারের জন্যে কঠিন হবে। কারণ হাসিনা সরকার ১৫ বছরের হিযবুত তাহরীরের যে কিছুই করতে পারেনি, সেটার প্রমাণ আজকে দিনের আলোর মতো দৃশ্যমান। প্রকৃতপক্ষে একটা সহিংস আন্দোলনকে দমন করাটা অপেক্ষাকৃত সহজ; যেমন - জেএমবি এবং এবিটিএর কর্মকান্ড একেবারেই শূণ্যের কোঠায় নেমে গেছে। কিন্তু অহিংস আদর্শিক ইন্টেলেকচুয়াল আন্দোলনকে ট্যাকল দেয়াটা অনেক কঠিন। কারণ এধরণের আন্দোলনে জনগণের মাঝে সহানুভূতি তৈরি হয় এবং বিশ্বাসগত দিকটা রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে ব্যাপক জনসমর্থন সৃষ্টি হয়। আর যেহেতু বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কেউই সমস্যার সমাধান দিতে পারছে না, তাই হিযবুত তাহরীর এক্ষেত্রে একটা সমাধান অফার করে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে ফেলেছে। এরকম একটা সময়ে সরকার যদি ভারতকে তুষ্ট করতে হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে লেগে যায়, সেটা সরকারের (যা বর্তমানে বেশ দুর্বল) জনসমর্থনকে আঘাত করবে; এমনকি সরকারের ভিতও নড়িয়ে দিতে পারে। এই সম্ভাবনার কথাটা হয়তো ভারত জানে এবং যুক্তরাষ্ট্রও জানে। তাদের সরকারের মাঝেও এব্যাপারে দ্বন্দ্ব থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মানুষ তো ভুল করেই। তাই এক্ষেত্রে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র যে ভুল করবে না, সেব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা নেই।
তাহলে দক্ষিন এশিয়া কি কোনো সংঘর্সের দিকে ধাবিত হচ্ছে?
ReplyDeleteআপাততঃ বাংলাদেশের সাথে ভারতের বড় কোন সামরিক সংঘাত অবশ্যম্ভাবী নয়। কারণ বাংলাদেশের ভেতর সামরিক হামলা করার মতো বাস্তবতা ভারতের জন্যে তৈরি হয়নি। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাবভার্সনের বিভিন্ন পদ্ধতিকে ভারত শতভাগ কাজে লাগাবে; যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের একশন ভারতের সরকারের মনোপুতঃ না হয়। অন্যকথায় বলতে গেলে, ভারত চাইছে বাংলাদেশ সরকারের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
Deleteতবে এটা নিশ্চিত যে, ১৯৪৭ সালের কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশ যতো বেশি ভারতের চাপের মাঝে পড়বে, সে ততো বেশি নিজের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে মরিয়া হয়ে উঠবে; এতে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হোক বা না হোক। এর আগে ১৯৭০এর দশকে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যতার মাঝেও বাংলাদেশ অতি দ্রুত তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছিল। ১৯৮০এর দশকের শেষের দিকে একসাথে ৭২ যুদ্ধবিমান জোগাড় করেছিল বাংলাদেশ - ঠিক এরশাদের পতনের আগে আগে; যখন ভারত এরশাদকে সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করছিলো। আবার ২০১৬-১৭ সালে মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থী সমস্যা, হোলি আর্টিসান ষড়যন্ত্র, এবং হিমালয়ের পাদদেশে দোকলাম নিয়ে চীন-ভারত উত্তেজনা বাংলাদেশকে আরেক দফা সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে ধাক্কা দেয়। ২০২০ সালে লাদাখে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব এই প্রচেষ্টাকে আরও গতি দিয়েছি। শুধুমাত্র ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অর্থনৈতিক কারণে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা কঠিন হয়ে যায়; যেই সমস্যা এখনও রয়েছে। তবে বেশি চাপে পড়লে খেয়ে-না-খেয়ে হলেও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করবে। এটাই হলো ১৯৪৭-কেন্দ্রিক চিন্তার বাস্তবতা - ১৯৪৭এর সীমানা দিয়ে আলাদা করা দেশগুলির মাঝে যদি একটা আরেকটাকে হুমকির মাঝে ফেলে, তাহলে বহু কষ্ট হলেও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করবে!
তবে যদি চীনের সাথে ভারতের বড় কোন যুদ্ধ হয়; যেমনটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই হবে যদি তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন যুদ্ধ শুরু হয়। তখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করবে যাতে করে বাংলাদেশ ভারতকে (বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে) সামরিক ট্রানজিট দেয়। যুক্তরাষ্ট্র চাইবে বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে চীনকে আক্রমণ করতে; আর ভারত চাইবে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু, যমুনা রেল সেতু, ভৈরব রেল সেতু এবং আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম এবং রসদ নিতে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যে অতি অপমানজনক হবে এবং সার্বভৈমত্বের কিছুই থাকবে না!
চীন- মার্কিন যুদ্ধে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে সরাসরি জড়ানোর চেষ্টা করা এবং ভারতকে মাঝ দিয়ে যেতে দিতে হবে। যদি এই বিষয়গুলো ওই সময়ে রাজি না হয় কোনো সরকার বা সেনাবাহিনী তখন সিচুয়েশনটা অভারল কিরূপ হতে পারে তা বিশ্লেষণ করবেন কি?
Deleteভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সন্মিলিত চাপ বাংলাদেশের কোন সরকারই নিতে পারবে না। সেকারণে ভারতকে বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে সামরিক রসদ নিতে দেয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের এবং ভারতের বিমানবাহিনীকে বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেয়া ছাড়া সরকারের কাছে কোন উপায়ই থাকবে না। এহেন অবস্থায় উপনীত হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মারাত্মক কোন্দল সৃষ্টি হতে পারে। কারণ অনেকেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের এহেন লঙ্ঘন সহ্য করতে পারবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে ভারতের সামরিক রসদ যাওয়ার ব্যাপারটা অনেকেই মেনে নিতে পারবে না। তবে একটা গ্রুপ ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির কথা উল্লেখ করে তাদের হুমকিতে মাথা নত করার কথা বলবে; তারা বলবে যে, এছাড়া আর কোন অপশন বাংলাদেশের হাতে নেই। এই গ্রুপ চাইবে যাতে চীন বাংলাদেশের অবকাঠামোর উপর হামলা করে; যাতে করে বাংলাদেশকে চীনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নিয়োজিত করা যায়।
Deleteএই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্যে মোটেই সন্মানজনক হবে না এটা নিশ্চিত এবং একইসাথে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে মারাত্মকভাবে আঘাত করবে। এই পরিস্থিতি এড়াবার জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা শক্ত আদর্শিক স্তম্ভের উপর ঐক্য প্রয়োজন। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ এমন কোন শক্ত স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত নয় বিধায় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি বাংলাদেশের নীতিকে প্রভাবিত করতে পারবে।
এটা বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে,জন-সাধারণের মনে বিশাল ফাটল সৃষ্টি করবে,সরকারের সাথে clash ও tension চরম আকারে পৌছাবে,এহেন পরিস্থিতি বিভিন্ন গ্রুপ ভাগ হয়ে গৃহযুদ্ধে অবস্থায় অপনিত হবে নয় কি? যেহেতু বাংলাদেশ অন্যের আদর্শ ধারণ করে চলে,তার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই। তখন মায়ানমারের পরিস্থিতি কি হবে ;এতে বাংলাদেশকে আরো বেশি উৎকন্ঠা ও উদ্বিগ্নতায় নিয়ে যাবে নয় কি??
Deleteভারত যদি বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে সামরিক রসদ নেয়ার অনুমতি আদায় করতে পারে, তাহলে গৃহযুদ্ধ হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ, একদিকে যেমন জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এটা মেনে নিতে পারবে না, অন্যদিকে মেনে না নিলেও গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করার মতো শক্তি তাদের হাতে থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কেউই এই গ্রুপকে সহায়তা দেবে না। আর ভৌগোলিক কারণে চীনের পক্ষে এই গ্রুপকে সহায়তা দেয়ার মতো বাস্তবতাও থাকবে না। বরং সবচাইতে বড় সম্ভাবনা থাকতে পারে সামরিক অভ্যুত্থানের। এক্ষেত্রে সেই অভ্যুত্থান যদি আদর্শিক দিকে দিয়ে জনগণকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়, তাহলে এই পরিবর্তনের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন থাকবে। সেটা অবশ্য শুধু সেই সময় নয়, এখন করতে পারলেও থাকবে।
Deleteস্থিতিশীলতা থেকে অস্থিতীশীলতার দিকে যাবার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলাটা অপেক্ষাকৃত সহজ। মিয়ানরারের পরিস্থিতি তো এখনই অস্থির। কাজেই এক-দুই বছর পর সেটা কতটুকু শান্ত হতে পারে, সেটা বলা দুষ্কর। একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির ব্যাপারে ভবিষ্যৎ বলাটা বেশ কঠিন।