১৬ই মে পর্যন্ত ফিলিস্তিনের উপর ইস্রাইলী হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১’শ ৮৮ জন নিহত হয়েছে। অপরদিকে ইস্রাইল বলছে যে, কয়েক হাজার ফিলিস্তিনী রকেট ছোঁড়ায় ১০ জন ইস্রাইলী নিহত হয়েছে। মার্কিন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বারংবারই বলছেন যে, ইস্রাইলের আত্মরক্ষা করার অধিকারের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত সমর্থন রয়েছে। ইস্রাইলের বিন্দুমাত্র সমালোচনা করা থেকে দূরে থেকেছে বাইডেন প্রশাসন। ১৫ই মে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বিতীয়বারের মতো ইস্রাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে কথা বলেছেন এবং ইস্রাইলের নিজেকে রক্ষা করার পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা বলেন। এর আগে ১২ই মে বাইডেন গাজায় ইস্রাইলী বিমান হামলার ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন যে, হামাসের রকেট হামলা ঠেকাতেই ইস্রাইল হামলা করছে। ইস্রাইলের অধিকার রয়েছে আত্মরক্ষা করার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন যে, তিনি আশা করছেন যে, খুব শিগগিরই এই সহিংসতার অবসান ঘটবে। অপরদিকে জাতিসংঘে ইস্রাইলী হামলা বন্ধ করার রেজোলিউশন আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
‘আল জাজিরা’ বলছে যে, প্রতিবছর ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়ার কারণে ইস্রাইলের নীতির উপর যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তবে তারা বলছে যে, ইস্রাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘শর্তহীন’ সমর্থন নতুন নয়। ইস্রাইলের কোন আগ্রাসনকেই মার্কিনীরা দোষারোপ করেনি। ইস্রাইলের জন্ম থেকে মার্কিন সমর্থনের একটা টাইমলাইন দিয়েছে তারা।
১৯৪৮ থেকে ২০১৮ ... ইস্রাইলী আগ্রাসনে মার্কিন সমর্থন
১৯৪৮ সালের মে মাসে ব্রিটিশরা ইস্রাইল রাষ্ট্র তৈরি করে; আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান প্রায় সাথেসাথেই নতুন ইহুদি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেন। ১৯৬৭ সালে ইস্রাইল যখন পার্শ্ববর্তী মিশর, জর্দান, সিরিয়া এবং ইরাক আক্রমন করে বসে এবং বড় আকারের ভূমি নিজের দখলে নিয়ে নেয়, তখনও ইস্রাইল মার্কিন সমর্থন পায়। এই যুদ্ধের চার বছর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন বলেন যে, কোন রাষ্ট্রের আশপাশ যখন শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, তখন সেই দেশকে আগ্রাসী হিসেবে আখ্যা দেয়াটাকে তিনি সমর্থন করেন না। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইস্রাইলের কাছ থেকে দখলীকৃত জমি পুনরুদ্ধারে আশেপাশের দেশগুলি ১৯৭৩ সালে ইস্রাইল আক্রমণ করে বসে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র ইস্রাইলকে বিমানে করে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন কংগ্রেসকে বলেন যে, ইস্রাইলকে দেয়া মার্কিন সমর্থন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সহায়তা করেছিল। ১৯৮২ সালে ইস্রাইল লেবানন আক্রমণ করে। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, পরিস্থিতি অনেক জটিল থাকার কারণেই তার সরকার ইস্রাইলী আগ্রাসনকে ধিক্কার জানায়নি অথবা ইস্রাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করা বন্ধ করেনি। তবে তিনি অস্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইস্রাইলকে আগ্রাসী হওয়ার জন্যে ‘সবুজ বাতি’ দিয়েছে। এরপর ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সালের মাঝে প্রথম ইন্তিফাদা চলে। ইস্রাইলী বাহিনী ফিলিস্তিনীদের উপর চরম নির্যাতন চালিয়ে যায়। কিন্তু সেসময় রেগ্যান সরকার ইস্রাইলের জন্যে সর্বোন্নত সামরিক প্রযুক্তি উন্মুক্ত করে দেয়। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ লেবাননের ক্বানায় জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরে ইস্রাইলী বোমা হামলায় ১’শর বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ইস্রাইলকে সমর্থন দিয়ে যান। মার্কিন ইহুদি লবি গ্রুপের সাথে কথা বলতে গিয়ে ক্লিনটন যুক্তি দেন যে, লেবাননের শরণার্থী শিবিরের শিশুরা হিযবুল্লাহর রিক্রুটমেন্টের শিকার; যাদেরকে ইস্রাইলে হামলার জন্যে প্রস্তুত করা হয়। কাজেই ইস্রাইলের অধিকার রয়েছে নিজেকে রক্ষা করার।
২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে ইস্রাইলের ডানপন্থী নেতা আরিয়েল শ্যারন দলবলসহ আল আকসা মসজিদের ভেতর প্রবেশ করলে দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূচনা হয়। ইস্রাইল গাজা এবং পশ্চিম তীরে বোমা হামলা চালাতে থাকে; আর জবাবে ফিলিস্তিনীরা বিভিন্ন স্থানে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। সংঘর্ষে ৩ হাজার ফিলিস্তিনি এবং ১ হাজার ইস্রাইলির মৃত্যু হয়। ২০০১ সালের পর থেকে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সহযোগী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জুনিয়র ইস্রাইলকে নতুনভাবে সহায়তা দিতে থাকেন। বুশ ঘোষণা দেন যে, ফিলিস্তিনি সরকার যতদিন সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে যাবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না। ২০০৮ সালের ২৭শে ডিসেম্বর গাজাতে ইস্রাইলের ‘অপারেশন কাস্ট লেড’ শুরু হয়। ২২ দিনের এই হামলায় ‘এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’এর হিসেবে ১৪’শ মানুষের মৃত্যু হয়; যার বেশিরভাগই ছিল সাধারণ বেসামরিক নাগরিক। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ পুরো ঘটনার জন্যে হামাসকে দায়ী করেন। এরপর ২০১২ সালের নভেম্বরে হামাসের নেতা আহমেদ জাবারিকে হত্যার পর গাজায় হামলা শুরু করে ইস্রাইল। এতে ১’শর বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইস্রাইলকে সমর্থন দিয়ে বলেন যে, নিজেদের সীমানার বাইরে থেকে তার দেশের উপর রকেট হামলা হলে কোন রাষ্ট্রেরই সহ্য করার কথা নয়। কাজেই ইস্রাইলের অধিকার রয়েছে নিজেকে রক্ষা করার। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে গাজাতে ১০ দিনের বিমান হামলার পর ইস্রাইলী সেনাবাহিনী গাজার ভেতরে প্রবেশ করে। জাতিসংঘের হিসেবে ১৫'শর বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক এই হামলায় নিহত হয়; যার মাঝে ৫’শ জনের বেশি ছিল শিশু। ১৮ই জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ইস্রাইলী প্রথানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে মার্কিন সমর্থনের কথা জানান। তিনি আবারও বলেন যে, ইস্রাইলের অধিকার রয়েছে নিজেকে রক্ষা করার। ২০১৮ সালে গাজাতে প্রতিবাদ করার সময় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করার পর ইস্রাইলকে সমর্থন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসময়ে মার্কিন দূতাবাস তেল আভিভ থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে স্থানান্তর করা হয়; যার ফলে আরও ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। অথচ সেসময় হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয় যে, ইস্রাইলের পুরো আক্রমণের দায় ছিল হামাসের। ইস্রাইলের অধিকার রয়েছে নিজেকে রক্ষা করার।
বাইডেন বাস্তবতাকে মেনে নেবেন, নাকি আদর্শকে রক্ষা করবেন?
ইস্রাইলের প্রতি জো বাইডেন সরকারের শর্তহীন সমর্থন ডেমোক্র্যাট শিবিরে ভাঙ্গন ধরাতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে। ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ বলছে যে, ‘প্রগ্রেসিভ’ এবং ‘লিবারাল’ প্রভাবশালী বামপন্থী গ্রুপগুলি বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সরকারকে সমর্থন দেবার পক্ষপাতি নয়। এদের মাঝে বিভিন্ন ইহুদী লিবারাল গ্রুপও রয়েছে। এই গ্রুপগুলির নেতাদের মাঝে রয়েছে বার্নি স্যান্ডার্স; যাদের সমর্থনের কারণেই বাইডেন নির্বাচন জিতেছেন, যেক্ষেত্রে এর আগে হিলারি ক্লিনটন বিফল হয়েছিলেন। ইস্রাইলের লবি গ্রুপগুলি বলছে যে, বর্তমানে ওয়াশিংটনে ইহুদী লবিস্টরা বেশিরভাগই লিবারাল এবং ইস্রাইলের আগ্রাসী আচরণের বিরোধী। এই গ্রুপগুলি বলছে যে, ইস্রাইলের জন্ম থেকেই ফিলিস্তিনী জনগণকে বাস্তুহারা করা হয়েছে। এই লোকগুলিকে বাড়ি ফিরতে না দিলে দীর্ঘমেয়াদে এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। ইস্রাইলী লবিস্টরা বলছে যে, এই লিবারাল ইহুদীদের কাছে ইস্রাইলের জন্যে সমর্থন না চেয়ে কৌশল পরিবর্তন করা উচিৎ। ওয়াশিংটনে ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান গ্রুপগুলিকে টার্গেট করলেই বরং বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো মাইক পেন্স বা মাইক পম্পেওএর মতো ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানরা ডেমোক্র্যাট দলের নন। তদুপরি এরকম ব্যক্তিদের অনেক মার্কিন অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। পরবর্তী মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিততে হলে বাইডেনকে সেসব রাজ্যে জিততে হবে।
মার্কিন কংগ্রেসের প্রগ্রেসিভ রাজনীতিবিদ আলেক্সান্দ্রিয়া অস্কার কর্তেজ বাইডেন সরকারের সমালোচনা করে টুইটার বার্তায় বলছেন যে, মার্কিন সমর্থনেই ইস্রাইল ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা চালাচ্ছে। ইস্রাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দিতে গিয়ে বাইডেন মানবাধিকারকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন। ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ বলছে যে, ‘প্রগ্রেসিভ’ গ্রুপগুলির সাথে নির্বাচনের সময় অনেক কাজ হয়েছে এবং নীতি নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে বাইডেন প্রশাসনের। কিন্তু এখন ‘হানিমুন’ শেষ! বহু দশক ধরেই বাইডেনকে ইস্রাইলীরা বন্ধু হিসেবে দেখেছে। ওয়াশিংটনে বাইডেনকে ক্যাথোলিকদের মাঝে ইস্রাইলের সবচাইতে বড় বন্ধু হিসেবে দেখা হতো। ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’এর সিনিয়র ফেলো কারমিয়েল আরবিট বলছেন যে, ইস্রাইলের ব্যাপারে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে হয়তো ডেমোক্র্যাটদের মাঝে বিভেদ থাকতে পারে। কিন্তু সেখানে ইস্রাইলের ব্যাপারে নীতিগত কোন বিরোধ নেই। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইউএস মিডলইস্ট প্রজেক্ট’এর প্রধান ড্যানিয়েল লেভি বলছেন যে, যদিও মার্কিন রাজনীতিতে ইস্রাইলের বিশেষ স্থান পরিবর্তন হবার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, তথাপি রাজনীতির জটিলতা সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। মার্কিন সিনেট এখন পুরোপুরি বিভক্ত। কামালা হ্যারিসের উপর বাইডেনের বিভিন্ন এজেন্ডা নির্ভর করছে; তাই হ্যারিসের ভোটটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
ইস্রাইলকে বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রই টিকিয়ে রেখেছে; যেকারণে ইস্রাইলের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি এতটা গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াশিংটনে ইস্রাইলের ব্যাপারে নীতি পরিবর্তনের কোন লক্ষণ দেখা না গেলেও যেটা পরিষ্কার তা হলো, ওয়াশিংটনের নীতি এখন অভ্যন্তরীণ কলহে জর্জরিত। ট্রাম্পের মতো ডানপন্থীদের ঠেকাতে বাইডেন প্রশাসনের জন্যে বামপন্থী ‘প্রগ্রেসিভ’ ও ‘লিবারাল’ বন্ধুদের প্রয়োজন রয়েছে। অথচ ডানপন্থী খ্রিস্টানদের ভোট না পেলে বাইডেনের পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হবে। ডানপন্থীদের খুশি করতে গিয়ে বাইডেন যদি মানবাধিকারের মতো আদর্শিক ব্যাপারে ছাড় দেন, তাহলে বামপন্থীদেরকে নিজের সাথে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ বামপন্থীরাই বর্তমানে আদর্শিক ব্যাপারগুলিকে ধরে রেখেছে। বাইডেনকে এখন এমন এক বাস্তবতাকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যা এর আগের কোন মার্কিন প্রেসিডেন্টকেই করতে হয়নি। এর আগে সকলেই ইস্রাইলকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে গেছেন; কাউকেই কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু এখন অভ্যন্তরীণ বিভেদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে যে, তারা আদর্শকে ধরে রাখবেন, নাকি বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আদর্শের ব্যাপারে ছাড় দেবেন? ইস্রাইলকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে বর্তমান বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বৈশ্বিক আদর্শিক নেতৃত্ব ধরে রাখা সম্ভব নয়।
প্যান ইসলাম কি আসলেই সম্ভব?
ReplyDeleteহযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ওফাতের পর থেকেই খলীফা নামক একটি পদ-ব্যবস্থা চলে আসছে। উনবিংশ শতাব্দি থেকেই খলিফার প্রভাব সীমিত হয়ে পড়লেও আলংকারিক হিসাবেও ছিল।
ব্রিটিশরাত খলিফা পদ বিলুপ্ত করে দিল। গত ১০০ বছর ধরে আর কোন খলিফা নাই।
মুসলমান অধ্যুষিত প্রায় ৬০ টা দেশ বা জাতিরাষ্ট্র রয়েছে। তাঁদের আলাদা ভাষা, বর্ণ, স্থানীয় সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা, পোষাক, খাবার রয়েছে। কেউ ইরানি,কেউ আরাবি, কেউ তুর্কি, কেউ আফ্রিকান,কেউ হিন্দুস্তানি বা বাঙালি, কেউ মালয় বা চৈনিক,কেউবা রুশ।
এসব বিভিন্ন জাতির লোকজন ইসলামী জীবন ব্যবস্থা অনুসরন করছে। কিন্তু তারা নিজ রাজ্যে বা রাষ্ট্রে জাতীয় সঙ্গীত বাজাচ্ছে, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছে।
এত এত নৃতাত্ত্বিক জাতিগত মুসলিম আর মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র রয়েছে। তাঁর উপর আবার রয়েছে সুন্নি-শিয়া, বিভিন্ন মাজহাব কেন্দ্রিক বিভাজন।
এরা কিভাবে প্যান ইসলাম হিসাবে আবির্ভূত হবে বলে আপনি মনে করেন? বা প্রায়ই বলা হয় মুসলিম বিশ্ব। এত বিভক্তি বিভাজন বর্তমান। তাহলে ১৫০+ কোটি মুসলমানদের দ্বারা কি মুসলিম বিশ্ব গঠিত হতে পারবে? তাঁদের জন্য কি একজন খলীফা নামক পদ সময়ের দাবীতে সৃষ্টি হবে?
এখানে একটা ব্যাপার হলো রাসূল (সাঃ) এব্যাপারে কিছু বলে গেছেন কিনা। তিনি কিছু বলে যাওয়া মানেই হলো আল্লাহ সেটা উনাকে বলতে আদেশ করেছেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, "... তারপর আবার ফিরে আসবে খিলাফত নবুয়্যতের আদলে।" (মুসনাদে আহমাদ, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ২৭৩)
Deleteএখন বিশ্বাসী হলে যে কেউই বুঝবেন যে, এটা হবেই। তবে কবে নাগাদ হবে, তা আল্লাহ ভালো জানেন। আর এটাও ঠিক যে, এটা ফেরেশতারা করে দেখাবেন না। রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন যে, মুসলিম সেনাবাহিনী পারস্য এবং রোম (কনস্টানটিনোপল) বিজয় করবে। পারস্য বিজয় হয়েছিল রাসূল (সাঃ) চলে যাবার অল্প কয়েক বছরের মাঝেই; কিন্তু কনস্টানটিনোপল বিজয় হয়েছিল প্রায় ৮'শ বছর পর। আজকে যারা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, মুসলিমরা আবার একত্রিত হতে পারবে কিনা, তাদের জন্ম যদি ওই ৮'শ বছরের মাঝে হতো, তাহলে তারা কি বিশ্বাস রাখতে পারতেন যে, মুসলিমরা কনস্টানটিনোপল আদৌ কখনো বিজয় করতে পারবে? অথবা এই কথাই ধরুন না, যখন ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখল করে নেয়, তখন কে ভেবেছিল যে, মুসলিমরা আবার একত্রিত হয়ে জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে? (কনস্টানটিনোপল দূরে থাকুক!) আবার যখন ১২৫৮ সালে মোঙ্গলরা খলিফার রাজধানী বাগদাদ ধ্বংস করে, তখন কি কেউ ভেবেছিল যে, এই মুসলিমরা কনস্টানটিনোপল বিজয় করতে পারবে?
ভূরাজনীতিতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো বুঝতে পারা যে, কোন বিষয়গুলি মানুষ পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা না বুঝতে পারলে, ভূরাজনীতি বোঝা কঠিন। যে অবিশ্বাসী, তারও এটা বুঝতে হয়।
রাসূল (সাঃ) যা বলেছেন বা ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছেন তা মহান আল্লাহ প্রদত্ত কুদরতি জ্ঞানের মাধ্যমেই। মানুষের কাজ কর্ম চিন্তা চেতনার সাথে রাসূল (সাঃ) এর তুলনা করা অর্থহীন।
Deleteএকদা মুসলমানদের খলিফা থাকা স্বত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম শাসকদের অধীনে বিভিন্ন রাজ্য ছিল। তাঁদের সাথে বিভিন্ন নন ইসলামিক
শাসকদের সম্পর্কও ছিল। বর্তমান বিশ্বেও একইভাবে মুসলিম শাসক রয়েছেন। কিন্তু এখন সাথে সাথে সেকুলার সংবিধানের প্রচলন, সংসদ ভিত্তিক পরিচালনা, জাতীয় সঙ্গীত, সীমান্ত, দেশপ্রেম,
বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থানরত নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ভিত্তিক জাতীয়তা বা রেসিজম প্রচলিত।
তাই আমার প্রশ্ন ছিল যে মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলো একত্রে আসতে পারবে কিনা!!! বা ১৫০+ কোটি মুসলমানদের জন্য খলিফা নামক পদ আলংকারিক হলেও সৃষ্টি করা যায় কিনা।
ভারত আর চীনের মাঝে প্রাকৃতিক বাঁধা হিমালয় পর্বত মালা। আবার চায়না-ভারত-আরব-বেদুইন-আফ্রিকান-ইউরোপ এদের মাঝে রয়েছে সাংস্কৃতিক পার্থক্য বিদ্যমান। একজন বাংলাদেশীর ভারতীয় নাচ,গান যে পরিমান ভাল লাগবে
তাঁর কাছে চায়না বা আরবের অনুষ্ঠান ভালো লাগবেনা। তুর্কি সিরিয়ালে ধর্মীয় উপাদান,আবেগ আর ইতিহাস ভিত্তিক আর বাংলায় ডাবিং করে দিচ্ছে বলেই বাংলাদেশীরা দেখছে। তাঁদেরকে যদি ভালো মানের আর্য আক্রমণ বাঁধা দানে অনার্যদের সংগ্রাম কাহিনী দেখানো হয় তাও বাংলাদেশীরা দেখবেন। আপনি যখন মঙ্গল আক্রমণের কথা বললেনই তখন বলতেই হয়ে যে মঙ্গলদের মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে আক্রমণ করার প্ররোচনা খলিফাই দিয়েছিলেন। তিনি চেংগিস খানকে খাওারিজম সাম্রাজ্য আক্রমণের জন্য পত্র দিয়েছিলেন।
ভূরাজনীতির কাজই হচ্ছে এসব বাস্তব প্যারামিটার বিবেচনা করে কৌশল প্রণয়ন করা। এবং কিভাবে লক্ষ্য হাসিল হবে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা।
রাসূল (সাঃ) যা ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন তা সত্য হবেই মহান আল্লাহ-র হুকুমের কারণে কিন্তু বাস্তব অবস্থা analysis এ বাস্তব ভিত্তিক আলোচনা করাই শ্রেয়।
বাস্তবতাকে চিন্তার ভিত্তি ধরলে সেই চিন্তা আলংকরিক কোন পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোন পরিবর্তন আনতে অক্ষম। পশ্চিমারা যখন সারা বিশ্বে তাদের আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়েছে, তখন কিন্তু তারা বাস্তবতাকেই পরিবর্তন করেছে; বাস্তবতাকে চিন্তার ভিত্তি হিসেবে নেয় নি। বাস্তবতার মাঝে আদর্শকে ‘ফিট’ করার চেষ্টাটা আদর্শিক চিন্তা নয়। রাসূল (সাঃ)এর কর্মপদ্ধতিকে বর্তমানে মুসলিম দুনিয়ার মানুষ ছেড়ে দিয়ে পশ্চিমা চিন্তাকে ধরে বসে আছে। এমতাবস্থায় এটা আশা করা ঠিক নয় যে, পশ্চিমা চিন্তার উপর ভর করে রাসূল (সাঃ)এর কথাগুলি বাস্তবায়িত হবে। রাসূল (সাঃ)এর আদেশগুলি বাস্তবায়িত করার বাধ্যবাধকতা একটা সেকুলার রাষ্ট্রের নেই। সেকুলার চিন্তায় রাসূল (সাঃ)এর আদেশগুলি ততটুকু পর্যন্ত বাস্তবায়নযোগ্য, যতটুকু পর্যন্ত তা সেকুলার ব্যবস্থাকে সমস্যায় না ফেলে। অর্থাৎ সেকুলার ব্যবস্থায় রাসূল(সাঃ) বাণী নয়, বরং সেকুলার নেতৃত্বের বাণী মানা বাধ্যতামূলক। বর্তমান বাস্তবতা পশ্চিমা আদর্শ, তাই এটার মাধ্যমেই চলতে হবে – এই চিন্তা পশ্চিমা আদর্শকে রক্ষা করার স্বার্থেই কাজ করবে।
Deleteরাসূল(সাঃ)এর সময় মক্কার মানুষেরা নিজেদের কন্যা সন্তান জীবন্ত কবর দিতো। এটা ছিল তাদের বাপদাদার সংস্কৃতি। তার অর্থ এই নয় যে, বাপদাদার সংস্কৃতিই চলতে হবে। আরবের এই কন্যা সন্তান পুঁতে ফেলা লোকগুলি তৎকালীন বাস্তবতা মেনে নিলে আজকে দুনিয়াতে এক’শ কোটি মুসলিম থাকতো না। আর খলিফাদের নেতৃত্ব না থাকলে এতদূর পর্যন্ত ইসলামের জয়জয়কার সম্ভব ছিল না। রাষ্ট্র এবং নেতৃত্ব ছাড়া এগুলি সম্ভব নয়। আল কায়েদার বা আইএসএর মতো করে ইসলাম প্রসার করেননি খলিফারা। মুসলিমদের সমস্যা ইসলাম নয়; বরং পশ্চিমা সেকুলার চিন্তাকে ধারণ। মদ, সুদ, জুয়া, ব্যাভিচারের সংকৃতিকে টিকিয়ে রেখে খলিফার কথা বলাটা অর্থহীন।
আর বংশীয় খলিফাদের ব্যক্তিগত দোষকে ইসলামের সমস্যা হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা ভেবে দেখা উচিৎ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের চারিত্রিক স্খলনকে কি ক্যাপিটালিজমের সমস্যা হিসেবে পত্রিকায় লেখা হয়েছিল? খলিফাদের আমলে বাগদাদের জ্ঞানের ভান্ডার, দক্ষিণ ইউরোপে ইসলামের শাসন, আফ্রিকা-ভারত-ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামের প্রসার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন, ইত্যাদি বাদ দিয়ে বংশীয় খলিফাদের ব্যক্তিগত ত্রুটির উপর সকল আলোচনাকে কেন্দ্রীভূত করা সেকুলার চিন্তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে বড় ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা হলো পশ্চিমা চিন্তার নিম্নগামিতা। যারা কেটলির নল থেকে জলীয় বাষ্প বের হতে দেখছেন, তারা অবশ্যই বুঝবেন যে, পশ্চিমা চিন্তার প্রতিস্থাপন কতটা আসন্ন। যারা এটা দেখছেন না, তাদেরকে ধৈর্য ধরতে বলা ছাড়া আর কোন বাক্য নেই। যেহেতু তারা বাস্তবতাকে পরিমাপ করতে পারছেন না, তাই তারা একবারে দেখে নেবেন। মাপকাঠি ছাড়া বাস্তবতা পরিমাপন সম্ভব নয়। আর এই মাপকাঠি আদর্শিক।
অনেক ধন্যবাদ।
Deleteস্যার ভূরাজনৈতিতে কোন বিষয়গুলো পরিবর্তন করা যায় না
ReplyDeleteযে বিষয়গুলিতে সর্বশক্তিমানের ব্যাপার থাকে, সেগুলি পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যেমন -
Deleteহিমালয় পর্বত এবং এর শাখাপ্রশাখাগুলি ভারতীয় উপমহাদেশকে চীন থেকে আলাদা করে রেখছে। এটা অপরিবর্তনীয়। এর সাথে রয়েছে মালাক্কা প্রণালী এবং আরও কিছু প্রণালী, যেগুলি পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়া জাহাজগুলি ব্যবহার করতেই হবে।
পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ্য।
সমুদ্রপথে ইউরোপের থেকে চীন যেতে হলে এশিয়া বা আফ্রিকা না হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর সমুদ্রপথ হলো পরিবহণের সবচাইতে সহজ উপায়। স্থলপথে ইউরোপ থেকে চীন যেতে হলেও মধ্য এশিয়ার ভূমি পার হয়ে যেতে হবে।
এগুলি ভৌগোলিক বাস্তবতা; যা মানুষের পক্ষে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এছাড়াও কিছু বাস্তবতা রয়েছে যেগুলি সামাজিক বা রাজনৈতিক হলেও মানুষের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ দুষ্কর; কিছুক্ষেত্রে অসম্ভব। যেমন -
ইউরোপে ইংরেজ-ফরাসী-জার্মানদের মাঝে জাতিরাষ্ট্রীয় বিরোধ। নিজেদের মাঝে স্বার্থগত বিরোধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিভাজন তৈরি করছে। এগুলি বাইপাস করার কোন উপায় নেই। সকলেই এগিয়ে থাকতে চায় এবং অন্যকে এগিয়ে থাকা থেকে দূরে রাখতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ধরে রাখতে অভিবাসীদের উপর নির্ভরশীলতা; যাদের বেশিরভাগ আসছে ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়া থেকে। অর্থাৎ এরা শ্বেতাঙ্গ নয়। এর ফলে শ্বেতাঙ্গরা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। এর ফলে শ্বেতাঙ্গরা ক্ষেপে গিয়ে উগ্রবাদী হয়ে যাচ্ছে। এর নিয়ন্ত্রণ কারুর হাতেই নেই।
চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেছে; অথচ চীনকে উপরে ওঠার ক্ষেত্রে পশ্চিমারাই সহায়তা দিয়েছিল। এখন নিজেদের তৈরি করা সমস্যা থেকে নিজেরাই বের হতে পারছে না। সহজ সমাধান নেই কারুর কাছেই।
এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে, যেগুলি পরিবর্তন করা কঠিন, অথবা অসম্ভব।
বর্তমানে যুদ্ধবিরতিতে থাকা ফিলিস্তিনি- ইস্রায়েলি কনফ্লিক্ট এ ইউ.এস এর ভুমিকা দেখার পর, আমি পুরোপুরি ভাবে নিশ্চিত। আপনার লেখাটির হেডলাইন একদম সঠিক।
ReplyDeleteআপনার সমর্থনের জন্যে ধন্যবাদ।
Deleteইস্রাইলের জন্যে পশ্চিমাদের, তথা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন তো নতুন কিছু নয়। যে ব্যাপারটা নতুন না হলো, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোন সমস্যা হয়নি; এবার হচ্ছে।