২৯শে মে ২০১৯
বৃষ্টিপাত, ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূ-প্রকৃতি
পৃথিবীর বহু স্থান রয়েছে যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়; কিন্তু মানুষ বসবাসের উপযোগী নয়। বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থিত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গল, আফ্রিকার কঙ্গো এবং ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও, সুমাত্রা এবং পপুয়া নিউ গিনির মত এলাকাগুলি এই প্রকারের মাঝে পড়বে। ঘন বনাঞ্চল হবার কারণে এই এলাকাগুলিতে মানুষ বসবাস কঠিন। সারাবছর বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলগুলি অনেক মানুষ বাঁচিয়ে রাখার জন্যে উপযোগী নয়। আবার রয়েছে পাহাড়ি অঞ্চল। বৃষ্টিপাত হলেও পাহাড়ি অঞ্চল বসবাসের জন্যে কম উপযোগী। প্রথম সমস্যা হলো, ঢালু অঞ্চলে হবার কারণে প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা কঠিন। আর দ্বিতীয় সমস্যা হলো যাতায়াতের সমস্যা। পাহাড়ি নদীতে নৌকা চালিয়ে উজানের দিকে যাওয়া কঠিন। আর পাহাড়ের গা বেয়ে রাস্তা তৈরি করা তো আরও কষ্টকর। জঙ্গল এবং পাহাড়ি অঞ্চলে চাষাবাদ অপেক্ষাকৃত কঠিন। আর চাষাবাদ ছাড়া বহু মানুষের জন্যে অন্নের সংস্থান করাটাও কঠিন। প্রচুর বৃষ্টি হলেও তা যথেষ্ট নয়; বৃষ্টির পানি যদি প্রাকৃতিকভাবে ধরে রাখার ব্যবস্থা থাকে, তাহলেই কেবল তা চাষাবাদের জন্যে উপযোগী এলাকা হবে। আর সেখানে অনেক মানুষের থাকার ব্যবস্থাও সম্ভব।
এরপরও কথা থেকে যায়। বৃষ্টির মেঘ সমুদ্র থেকে ভূমির দিকে এগুলে যেকোন স্থানেই বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে পারে। এই বৃষ্টি যত কম স্থানের উপরে পড়বে, সেখানে স্বাদু পানির সংস্থান সবচাইতে বেশি হবে। যদি বৃষ্টি অনেক বেশি এলাকা নিয়ে পড়ে, তবে সেই পানি ব্যবহার করতে একটা নির্দিষ্ট স্থানে বাস করলেই হবে না; ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে হবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ যদি অনেক বেশি হয়, সেক্ষেত্রে তা অনেক বেশি মানুষের সংস্থান করতে পারবে। বৃষ্টির নির্দিষ্ট স্থানে পড়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হলো পাহাড়-পর্বত। বৃষ্টির মেঘ উঁচু পাহাড়ে আটকে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পারে। যদি সেই পাহাড়ের পাদদেশে মানুষ বসবাস করে, তাহলে তারা সেই বৃষ্টির পানি যথেষ্ট পরিমাণে পাবে। তবে পাহাড়ের পাদদেশের আয়তন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক স্থানেই পাহাড় প্রায় সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত। তাই পাহাড়ে মেঘের ধাক্কায় যে বৃষ্টিপাত হয়, তা সরাসরিই সমুদ্রে চলে যায়। তাহলে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করতে হলে পাহাড়ের পাদদেশের প্রাকৃতিক পরিস্থিতি দেখতে হবে।
একটা সমতল এলাকায় বৃষ্টির পানি পড়লে সেটা সমুদ্রে যেতে অনেক সময় নেবে। ভূমির ঢাল যত কম হবে, পানি তত ধীরে ধীরে সমুদ্রে পৌঁছাবে। আর এই ধীরে সমুদ্রে পৌঁছার মাঝে সমতলে বসবাসরত মানুষেরা সেই পানিকে ব্যবহার করতে পারবে। সেই অঞ্চলের নদী-নালা-খাল-বিল পানি ধরে রাখতে পারবে অনেক সময়; যদিও তা একসময় না একসময় সমুদ্রে পৌঁছাবে। এখানে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চলের বৃষ্টির পানি খুব দ্রুত সমুদ্রে চলে যায়; সমতলের পানি অনেক ধীরে যায় সমুদ্রে। আরও ব্যাপার রয়েছে সমতলের আয়তন নিয়ে। সমতলের আয়তন বেশি হলে সেই পানির সমুদ্রে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগবে; আয়তন ছোট হলে দ্রুত পৌঁছাবে সমুদ্রে। আর এই সমতলের পাশে পাহাড় থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড় যদি সমতল আর সমুদ্রের মাঝে থাকে, তাহলে পাহাড় বৃষ্টির মেঘকে সমতলে পৌঁছাতে দেবে না; অর্থাৎ সমতলে বৃষ্টি হবে না এবং তা মানুষ বসবাসের জন্যে কম উপযোগী হবে। অন্যদিকে সমতল যদি পাহাড় এবং সমুদ্রের মাঝে থাকে, তাহলে বৃষ্টির মেঘ পাহাড়ে বাধা পেয়ে যে বৃষ্টি হবে, তার পানি ঐ সমতলের মাঝ দিয়েই ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পৌঁছাবে। এক্ষেত্রে ঐ সমতলে থাকা মানুষ বহু সময় ধরে বহমান পানি ব্যবহার করতে পারবে।
আর এই সবকিছুর উপরে রয়েছে বাতাসের দিক। সমুদ্র থেকে বৃষ্টির মেঘ সকল দিকে ধাবিত হয় না; সকল সময়েও ধাবিত হয় না। বাতাসের দিকও সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়, যা কিনা ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ বৃষ্টির পানির পুরোপুরি ব্যবহার হতে হলে সমুদ্র থেকে বাতাসের দিক হতে হবে নির্দিষ্ট ভূখন্ডের দিকে, যেখানে রয়েছে বিরাট সমতল, এবং সমতলের পর রয়েছে উঁচু পাহাড়, যেখানে বৃষ্টির মেঘ ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টি ঘটায়। সেই সমতল আর সমুদ্রের মাঝে থাকবে না কোন পাহাড়, যা বৃষ্টির মেঘ সমতলে ঢোকার আগেই আটকে দিতে পারে। জঙ্গলের মাঝে মানুষ বসবাস কঠিন হবে, তাই এই পুরো এলাকা আবার জংলা অঞ্চলে হলেও সমস্যা। প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস করেও অবশ্য কৃষির ব্যবস্থা করা সম্ভব।
“বেঙ্গল গেইট”
ভারতীয় উপমহাদেশে বৃষ্টিপাতের সেই অবস্থাটাই বিরাজ করছে, যা কিনা বহু মানুষের বসবাসের জন্যে উপযোগী। এর মাঝে আবার গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রা-মেঘনা অববাহিকার গুরুত্ব সবচাইতে বেশি।
প্রথমতঃ ভারত মহাসাগরের বৃষ্টির মেঘগুলি ঠিক দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে এই নদী অববাহিকা পর্যন্ত পৌঁছে; মাঝে কোন বাধা নেই। এটা সম্ভব হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের ফানেল আকৃতির কারণে।
দ্বিতীয়তঃ উপকূলে কোন পাহাড় নেই; তাই বৃষ্টির মেঘ ভূমির অনেক ভেতর ঢুকতে পারে।
তৃতীয়তঃ ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলটা উপদ্বীপ আকৃতির; যার পূর্ব উপকূলে রয়েছে পূর্ব-ঘাট পর্বত। এই পর্বতের কারণে বৃষ্টির মেঘগুলি উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়। কিন্তু পাহাড়ের উত্তরের দিকে বৃষ্টি খুব হয়। পূর্ব-ঘাট পর্বত যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানেই বৃষ্টি মেঘের সামনে সমতলে ঢোকার একটা দরজা খুলে যায়। এই দরজাটাই হলো বাংলা অঞ্চলে বৃষ্টির মেঘ ঢোকার রাস্তা। এই দরজার পূর্বে রয়েছে আরাকান পর্বত, আর পশ্চিমে পূর্ব-ঘাট পর্বত। এই “বেঙ্গল গেইট” দিয়েই ঢোকে ভারত মহাসাগর থেকে উড়ে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমের মেঘ।
চতুর্থতঃ এই মেঘ ঢুকে যায় সমতল অববাহিকায়, এবং এর উত্তরের উঁচু হিমালয় পর্বত এবং এর শাখা প্রশাখায় মেঘ ধাক্কা খেয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। পঞ্চমতঃ একবার “বেঙ্গল গেইট” দিয়ে বৃষ্টির মেঘ ঢুকে গেলে তা তিনদিকে মেঘের মাঝে আটকা পড়ে যায়, এবং এর পুরোটাই বৃষ্টি হয়ে এই সমতলে ঝরে পড়ে; পালাবার পথ নেই! উত্তর ভারতে গঙ্গা নদীর অববাহিকা জুড়ে বেশ কিছু এলাকায় এই মেঘ পৌঁছে। তবে যত উত্তর-পশ্চিমে যাওয়া যায়, বৃষ্টি কমতে থাকে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় হিমালয়ের পাদদেশে ব্যাপক বৃষ্টি হয়, যা ব্রহ্মপুত্র নদের মাধ্যমে সমতলে প্রবাহিত হয়। এরও পূর্বে হিমালয়, মেঘালয় এবং আরাকান পর্বতের মাঝে আটকা পড়ে মেঘ। এইসব পাহাড়ে বৃষ্টির পানি ব্রহ্মপুত্র, বরাক এবং অন্যান্য নদী বেয়ে সমতলে পৌঁছায়। মোটকথা “বেঙ্গল গেইট”এর ভেতর দিয়ে ঢোকার পরে এই মেঘগুলি একটা বৃষ্টির রাজ্য তৈরি করে, যা কিনা দুনিয়ার আর কোথাও দেখা যায় না।
গঙ্গা অববাহিকায় বাস করে ভারতের ৪০ কোটি মানুষ। আর গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-বরাকের মিলিত স্রোতের নদী-বিধৌত অঞ্চলে বাস করে আরও ২১ কোটির মতো মানুষ। অর্থাৎ এই “বেঙ্গল গেইট”এর মাঝ দিয়ে ঢোকা বৃষ্টির মেঘের উপর বেঁচে থাকছে ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি এই অঞ্চলে চাষাবাদের এক বিরাট সুযোগ করে দিয়েছে; যা কিনা এত বিশাল এক জনসংখ্যাকে বাঁচিয়ে রাখছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই মৌসুমী বায়ু প্রতিবছর প্রায় একই সময়ে একই দিক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ছোটে। আর বঙ্গোপসাগরের ফানেলের কারণে তা বাধা না পেয়ে উত্তরের দিকে যেতে থাকে। এরপর সে পেয়ে যায় “বেঙ্গল গেইট”! পুরো মেঘমালা ঢুকে যায় এই গেইট দিয়ে; আর আটকা পড়ে যায় তিন দিকের উঁচু পাহাড়ের মাঝে; বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পরে; তৈরি করে বিশাল বিশাল প্রবাহমান জলাধার, যেগুলিকে আমরা নদী বলে জানি। তিন নদীর মিলিত স্রোতেই এই অঞ্চলই পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অঞ্চলগুলির একটা। এই সম্পদ হলো এর মৌসুমী বায়ু, ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূ-প্রকৃতি; যার সবগুলিই সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত! এবং এগুলি কখনোই ফুরাবার নয়, যদি না সৃষ্টিকর্তা অন্য কিছু চান! অর্থাৎ এই অঞ্চল যে সবচাইতে সম্পদশালী হবে, তা সৃষ্টিকর্তা নিজেই ঠিক করে দিয়েছেন!
ঔপনিবেশিকরাও বুঝেছিল “বেঙ্গল গেইট”এর গুরুত্ব
ষোড়শ শতকে ঔপনিবেশিক শক্তিরা এখানে এসেছিল এই সম্পদের খোঁজেই। তারা জানতো এই সম্পদ ফুরাবার নয়। তাই তারা চীরজীবন এই সম্পদকে নিজেদের উন্নয়নে ব্যবহার করার লক্ষ্যে রাজনৈতিকভাবে এখানকার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলির দখল নিতে মনোযোগী হয়। পর্তুগীজরা যখন এই “বেঙ্গল গেইট”এ পৌঁছায়, তখনও তারা এখানকার সম্পদের মাপ করতে সক্ষম হয়নি। আসলে এত সম্পদ তারা জীবনে কখনও দেখেনি বলেই এই মাপ তারা করতে পারেনি। এখানকার ভাব বুঝতেই তাদের বেশকিছু সময় চলে যায়। তবে ভাব বোঝার সাথেসাথেই তারা কাজে নেমে পড়ে – এই অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতেই হবে। সপ্তদশ শতকে এখানে হাজির হয় ডাচ, ব্রিটিশ, ফরাসীরা। এরাও এই অঞ্চলের অশেষ সম্পদের লোভে পড়ে যায়। শুরু হয় এদের মাঝে দ্বন্দ্ব। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশরাই টিকে যায়। এবং তারা বেঙ্গলকে পুরো ভারতের মাঝে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিতো। তাদের আগে পর্তুগীজরাও তা-ই দিয়েছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন যোদ্ধা; জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি যুদ্ধের ময়দানে কাটিয়েছেন। তার সেনাবাহিনীকে টিকিয়ে রাখার আর্থিক শক্তিটুকুর বেশিরভাগটাই তিনি বাংলা থেকে পেয়েছিলেন। কাজেই অবাক হবার কি আছে, যখন তিনি বাংলাকে বলেছেন “হিন্দুস্তানের স্বর্গ”? ব্রিটিশরা এই “স্বর্গ” নিয়ে এতটাই প্রেমে পড়েছিল যে, ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বাকি দুনিয়ার সবকিছু ফেলে তারা তাদের সকল চিন্তাকে ভারত-কেন্দ্রিক করে ফেলেছিল। ভারতের, তথা বাংলার সম্পদকে ব্যবহার করে ব্রিটিশরা দেড়’শ বছর দুনিয়া শাসন করেছিল। দুনিয়ার ইতিহাসের সবচাইতে শক্তিশালী নৌবহর তারা তৈরি করতে পেরেছিল ভারতের সম্পদকে কাজে লাগিয়েই।
এখানেই শেষ নয়। এশিয়ার অন্য প্রান্তে রয়েছে আরেক জনবহুল অঞ্চল – চীন। আরও রয়েছে এর আশেপাশের মালয় দ্বীপপুঞ্জ এবং ইন্দোচীন উপদ্বীপ। হিন্দুস্তানের সাথে চীন এবং আশেপাশের অঞ্চলের চলেছে হাজার বছরের বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ ছিল আরব বণিকদের হাতে। আরবরা বাণিজ্য করতো; কারণ তাদের অঞ্চল ছিল মরুভূমি; ফসল ফলে না একেবারেই। তার রিযিক অন্বেষণে তারা হয়েছিল বণিক। হিন্দুস্তান আর চীন – এই দুই অর্থনৈতিক দৈত্যের মাঝে বাণিজ্যের সম্পর্ক গভীর করার পিছরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল আরবদের। আর আরবরা ইসলাম নেবার পর থেকে এই বাণিজ্যের প্রসার আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। ইসলামের দাওয়া পৌঁছে দেবার স্পৃহা মুসলিম বণিকদের বহুদূর নিয়ে গেছে। পুরো ভারত মহাসাগর জুড়ে তারা বসতি স্থাপন করেছিল; এনেছিল ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন। হিন্দুস্তান-চীন-ইন্দোচীন-মালয়ের অর্থনীতি ছিল একই সূত্রে গাঁথা। মুসলিমরা এই সম্পদশালী অঞ্চলের সম্পদকে বাণিজ্যের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিল। মুসলিমদের এই বাণিজ্য সাফল্যই ইউরোপিয়দের অনুপ্রাণিত করেছিল পূর্বের সাথে বাণিজ্য করার। এটা তারা করতে পেরেছিল ভাস্কো দা গামার ভারত মহাসাগর অভিযানের পর থেকে।
ইতিহাসে হিন্দুস্তান এবং চীনের অর্থনীতি একত্রেই ওঠা-নামা করেছে। দুনিয়ার প্রায় অর্ধেক মানুষের বসবাস সবসময় এখানেই ছিল। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই এখানকার অর্থনীতি ছিল দুনিয়ার অর্থনীতিরও অর্ধেক। এই ব্যাপারটা পরিবর্তন করে ফেলে ঔপনিবেশিকেরা। তারা পুঁজিবাদী চিন্তার মাধ্যমে সম্পদের অসুস্থ্য বন্টন করে ইউরোপকে সম্পদশালী করে, যেখানে ইউরোপের জনসংখ্যা সারা দুনিয়ার তুলনায় কিছুই নয়। একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যা প্রয়োজন, তার চাইতে বহুগুণ সম্পদ তারা কুক্ষিগত করে সারা দুনিয়ার অর্থনীতিকে ধ্বংস করে। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্যের কারণেই হিন্দুস্তান-চীনের বিশাল জনসংখ্যা। এটা সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ঠিক করে দিয়েছেন। তাঁর তৈরি করে দেয়া এই নিয়মের হেরফের করার ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে তৈরি হয়েছে সংঘাত এবং অশান্তি।
“আর তারা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব সত্ত্বার পূজা করে যাদের না আকাশ থেকে তাদের কিছু রিযিক দেবার ক্ষমতা ও অধিকার আছে, না পৃথিবী থেকে?” [সূরা আন-নাহল – আয়াত ৭৩]