Tuesday 26 September 2017

ভারতের আধিপত্যবাদকে যেভাবে মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ

মালদ্বীপের রাজধানী মালের অদূরে ২০১২ সালে ভারত-শ্রীলংকা-মালদ্বীপ অংশ নিচ্ছে যৌথ সামরিক মহড়া 'দোস্তি-১১'-তে। ভারত যৌথ সামরিক মহড়াগুলিকে ব্যবহার করে এই এলাকার ছোট দেশগুলির উপরে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যে। ভারতের প্রভাবকে কমাতে হলে বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের ছোট দেশগুলির সাথে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।    
২৭শে সেপ্টেম্বর ২০১৭

দুর্বল রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদ


ভারত একটা দুর্বল রাষ্ট্র। দুর্বল ভারতকে সর্বদাই সুপারপাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করেছে, এবং উপমহাদেশকে ‘সঠিকভাবে’ বিভাজিত রেখে বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরে কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের আবির্ভাবকে থামিয়ে রেখেছে, যা কিনা সুপারপাওয়ারের বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা ফর্মূলা। একসময় সোভিয়েত রাশিয়া ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করেছে; এখন করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতবড় একটা রাষ্ট্রের বিশাল সম্পদকে সুপারপাওয়ার ব্যবহার করতে চাইবে – এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এধরনের ভূরাজনৈতিক খেলার কারণে ভারতের প্রতিবেশীদের বারোটা বাজছে সর্বদাই। ঠিক একারণেই ভারত তার প্রতিবেশীদের জন্যে হুমকিস্বরূপ। চীনকে ব্যালান্স করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ব্যবহার করছে। ভারতকে তারা নিয়ে গেছে দক্ষিণ চীন সাগর, এবং ফিলিপাইন সাগরে। আর চীন অন্যদিকে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করেছে তার নৌবাহিনী নিয়ে। বাব-এল মান্ডেব প্রণালীর পাশে জিবুতিতে করেছে সামরিক ঘাঁটি [১]; পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং মিয়ানমারে করছে স্ট্র্যাটেজিক প্রজেক্ট [২] । আর এতে এই অঞ্চলে ভারত-চীন দ্বন্দ্বও উঠেছে চরমে। মজার ব্যাপার হলো, এই পুরো গেমটারই নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতকে চীনের পেছনে লাগিয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক ইউনিটগুলিকে ভারত মহাসাগরের অন্যত্র মোতায়েন করতে সক্ষম হচ্ছে। এভাবেই ব্যবহৃত হচ্ছে ভারত। [৩]



মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে অং সান সু কি-র মাধ্যমে। আর সেই সুযোগখানা নিতে পেছনে পেছনে ঢুকেছে ভারত। এর আগে মিয়ানমারে যেমন চীনের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল, এখন সেটা বিভক্ত হয়ে গেছে চীন আর ভারতের মাঝে, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করেছে। মিয়ানমারে প্রভাব ধরে রাখতে ভারত আর চীন উভয়েই মিয়ানমারের উগ্রপন্থী জঙ্গি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দিকে না তাকানোর নীতি নিয়েছে। রোহিঙ্গারা মুসলিম হওয়াতে এই নীতি নেয়া উভয়ের জন্যেই হয়েছে সহজ, কারণ উভয় দেশেই মুসলিমরা নিপীড়িত। রাখাইনে মুসলিমদের উপরে নিপীড়নের কারণে সরাসরি সমস্যায় পতিত হয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রেও ভারত ও চীন উভয়েই বুঝিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ধরে রাখতে গিয়ে তারা মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক খারাপ করবে না। অর্থাৎ মিয়ানমার তাদের জন্যে বাংলাদেশের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের কেউই আসলে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী একটা রাষ্ট্রকে দেখতে চাইছে না। এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্যে কতটা বিপদ বয়ে আনছে, সেটা তারা এখনো অনুধাবন করতে সক্ষম হননি।



ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়ায় ভারত এবং চীন তাদের প্রতিযোগিতাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, যা কিনা তার প্রতিবেশীদের নাভিশ্বাস উঠিয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা ‘ইনজেক্ট’ করার আগেই বেশ ক’বছর ধরে ভারত-চীন ঠেলাঠেলি চলছে। চীনের অর্থায়নে বিভিন্ন বড় প্রজেক্ট বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গ্রুপগুলি বিভিন্নভাবে সেই প্রজেক্টগুলিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইন বসাতে জেটি বানাতে গিয়ে আদালতে মামলা করে প্রজেক্ট আটকে দিয়েছে; দেরি করিয়েছে ছয় মাস। চার-লেইন প্রজেক্টে শুধু চাইনিজ সেকশনে গাদা-গাদা মামলা করে দেরি করিয়েছে কয়েক বছর। বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্যে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে মারামারি করিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। পত্রিকায় রিপোর্ট করে বিভিন্ন প্রজেক্টের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করেছে। বিমানবন্দর উন্নয়ন, গভীর সমুদ্রবন্দর – এসব প্রজেক্ট আটকে দিয়েছে একাধিকবার। এলএনজি প্রজেক্ট পিছিয়ে দিয়েছে কমপক্ষে পাঁচ বছর। আর পদ্মা সেতুর কথা সবাই জানেন। যারা এই কাজগুলি করেছে, তাদের দু’টা উদ্দেশ্য একত্রে হাসিল হয়েছে – ১। চীনের প্রভাবকে ব্যালান্স করা এবং ২। বঙ্গোপসগরে শক্তিশালী একটা রাষ্ট্র তৈরিতে বাধা দেয়া। ভারত-মার্কিন-চীনা এই ভূরাজনৈতিক খেলায় নাভিশ্বাস উঠেছে বাংলাদেশের জনগণের। শুধু কি বাংলাদেশের জনগণের? না; আশেপাশের দেশগুলিতেও এই খেলা চলছে।

    
জুন ২০১৭ - ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ 'আইএনএস তেগ' টেনে নিয়ে চলেছে মরিশাসের জন্যে তৈরি প্যাট্রোল বোট 'ভ্যালিয়্যান্ট'-কে। ভারত বিভিন্ন দেশে তার প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করছে। রপ্তানি এগিয়ে নিতে ঋণও দিচ্ছে ভারত সরকার।

ভারতের আধিপত্যবাদ এবং সামরিক হস্তক্ষেপ




মিয়ানমারের নৌবাহিনী ৩টা ফ্রিগেট নিজ দেশেই চীনের সহায়তায় তৈরি করলেও ভারতের সাথে মিয়ানমারের সখ্যতা বাড়ার পর থেকে চীন এক পা এগুচ্ছে তো তিন পা পেছাচ্ছে। বহুদিন ধরে জাহাজগুলির কাজ ঝুলে ছিল। এই সুযোগে ভারত এই ফ্রিগেটগুলির জন্যে রাডার এবং সোনার সরবরাহ করে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিমান, জাহাজ এবং সাবমেরিন খুঁজতে বা টার্গেট করতে মিয়ানমার নৌবাহিনী ভারতীয় ইলেকট্রনিক্স (ইউরোপিয়ান জিনিস লাইসেন্স প্রডাকশন) ব্যবহার করবে! এখন মিয়ানমার নৌবাহিনীর জন্যে অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল (ওপিভি) দিতে চাচ্ছে ভারত, যেগুলিকে খুব শিগগিরই হয়তো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিপক্ষে দেখা যাবে সমুদ্রে। ভারত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আরও বেশি করে সামরিক প্রশিক্ষণ দেবার চেষ্টায় রয়েছে। উভয় দেশ খুব শিগগিরই যৌথ সামরিক মহড়া দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারতের স্পেশাল ফোর্স অপারেশনও চালিয়েছে, কিন্তু মিয়ানমার তাতে কিছুই মনে করেনি। মিয়ানমারের সাথে ভারতের সামরিক সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্যে নতুন হুমকি তৈরি করছে।



শ্রীলংকায়ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে ভারত আর চীনের মাঝে বেশ বড়সড় ধাক্কাধাক্কি হয়ে গেছে। ভারত কিছুতেই শ্রীলংকাতে চীনা সমুদ্রবন্দর সমর্থন করবে না, সেটা শ্রীলংকার অর্থনীতির জন্যে যতটা গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন। শ্রীলংকার সামরিক বাহিনীকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ভারত। যাদিও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা হিসেব করলে শ্রীলংকারই বরং প্রশিক্ষক হবার কথা! শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর জন্যে ভারত দিয়েছে দু’টা অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল (ওপিভি)। আরও দু’টা নতুন ওপিভি তৈরি করে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে তাদের কোস্ট গার্ডের একটা কাটার। অস্ট্রেলিয়াও দিয়েছে প্যাট্রোল বোট। এর আগের চীনা এবং ইস্রাইলী প্যাট্রোল বোটগুলিকে ভূরাজনৈতিকভাবে ব্যালান্স করছে এগুলি। শ্রীলংকাকে সামরিক রাডারও দিয়েছে ভারত। তামিল টাইগারদের কয়েক যুগ ধরে সহায়তা দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এখন সামরিক সহায়তা দেয়ার চেষ্টাকে কি ধরনের দু’মুখী নীতি বলা উচিৎ?

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল, যাকে ভারত "নিজস্ব হ্রদ" মনে করে
    

১৯৮৮ সালে মালদ্বীপেও সামরিক হস্তক্ষেপ করেছিল ভারত (অপারেশন ক্যাকটাস)। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে রক্ষার নামে এই সামরিক হস্তক্ষেপ ভারতের প্রভাব বিস্তারেরর অংশ ছিল। এখন সেখানে চীনের সাথে ভারতের চলছে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। মালদ্বীপে বিমানবন্দরের উন্নয়ন ভারতীয় অর্থায়নে না করে চীনা অর্থায়ন করায় ভারত জোরেসোরে লেগেছে এর পেছনে। অথচ বর্তমানে পুরো মালদ্বীপ জুড়ে রাডার বসাচ্ছে ভারত, যাতে মালদ্বীপের আশেপাশের পুরো এলাকার সমুদ্রের উপরে নজরদাড়ি করা যায়। ২০০৭ সালে প্রথমটা, ২০১২ সালে দ্বিতীয়টা এবং ২০১৫ সালে তৃতীয় রাডারটা বসায় ভারত। মালদ্বীপকে দু’টা সামরিক হেলিকপ্টার, কিছু সামরিক গাড়ি, আর প্যাট্রোল বোট দিয়েছে ভারত। এর উপরে নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং যৌথ মহড়া তো আছেই। এগুলির মাধ্যমে মালদ্বীপের নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় ভারত।



নেপালের সাথে ভারতের সম্পর্ক নিম্নমুখী বেশ অনেকদিন ধরেই। চীন হিমালয়ের মাঝ দিয়ে কাঠমুন্ডু পর্যন্ত রাস্তা তৈরির পর থেকে নেপালকে নিয়ে ভারত-চীনের খেলা বেড়ে চলেছে। নেপাল সর্বদা ভারতের সাথেই যৌথ সামরিক মহড়া চালাতো। কিন্তু ২০১৭-এর মে মাসে সেখানে যুক্ত হয়েছে চীন। নেপালের উপরে চাপ সৃষ্টির যেকোন সুযোগই ভারত হাতছাড়া হতে দেয়নি। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হওয়া নেপালে একই বছরের সেপ্টেম্বরেই ভারত মদেশী আন্দোলনের নাম করে ‘আনঅফিশিয়াল’ অবরোধ দেয়। ভূমিকম্পের পরপর রিলিফের কাজ করতে আসা ভারতীয়দের ভাবচক্করের বিরুদ্ধে যেমন নেপালিরা খেপে গিয়েছিল, সেই খেপা ভাবটাই মদেশী আন্দোলনের সময় আরও ব্যাপক বিস্তৃতি পেয়েছে।



ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশ মরিশাস এবং সেইশেল-এও ভারত প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে। ১৯৮৬ সালে ‘অপারেশন ফ্লাওয়ারস আর ব্লুমিং’-এর নামে ভারত সরকার সেইশেল সরকারকে অভ্যুত্থান থেকে বাঁচাবার নামে সামরিক হস্তক্ষেপ করেছিল। ১৯৮৩ সালে ‘অপারেশন লা দোরা’র নামে ভারত সরকার মরিশাসে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছিল; শেষ মুহুর্তে তা বাতিল করা হয়। বর্তমানেও সেইশেল এবং মরিশাসে ভারতের প্রভাব রয়েছে। তাদের জন্যে ভারত দিচ্ছে প্যাট্রোল বোট। ২০১৪-এর ডিসেম্বরে মরিশাসের জন্যে ভারত একটা ওপিভি তৈরি করে দিয়েছে। সেটা কেনার জন্যে আবার মরিশাস সরকারকে ঋণও দিয়েছে ভারত। ২০১৭ সালেও মরিশাসের কাছে প্যাট্রোল বোট বিক্রি করেছে ভারত। এভাবে ঋণের মাধ্যমে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করে ছোট দেশগুলির উপরে ভারত তার প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।

ডিসেম্বর ২০১৪ - বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ 'বিএনএস সমুদ্র জয়' পানি সহায়তা নিয়ে রওয়ানা দিয়েছে মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে। এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব কমাতে বাংলাদেশকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামরিক সহযোগিতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।    
 

বাংলাদেশের সাথে আশেপাশের দেশগুলির সম্পর্ক



শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সমুদ্র-বাণিজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাব। একইসাথে শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে প্রাচীন এক বন্ধন। একসময় এই বদ্বীপের মানুষেরাই শ্রীলঙ্কাকে বসবাসের উপযোগী করেছিল। আর মালদ্বীপের মানুষের সাথে বাংলাদেশের মানুষের বন্ধনও যথেষ্ট গভীর। মালদ্বীপের অর্থনীতির মূলে রয়েছে তাদের ট্যুরিজম ব্যবসা, যেখানে বেশিরভাগ লোকই বাংলাদেশী। মাত্র চার লাখ মানুষের ঐ দেশে ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশীর বসবাস! উভয় দেশেই সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দুর্যোগে বাংলাদেশ সহায়তা দিয়েছে। ২০১৪-এর ডিসেম্বরে মালদ্বীপে পানি সমস্যা হলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ দিয়ে মালদ্বীপে পানি এবং পানি শোধনের যন্ত্রপাতি পাঠানো হয়েছিল। ২০১৬-এর জানুয়ারীতে মালদ্বীপকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে তৈরি গাড়িও দিয়েছে। ২০১৭-এর মে-জুন মাসে শ্রীলংকায় বন্যার সময় বিমান বাহিনীর বিমান এবং নৌবাহিনীর জাহাজে করে ত্রাণসামগ্রী পাঠায় বাংলাদেশ। [৪]



নেপালের দুর্যোগের সময়েও বাংলাদেশ সহায়তা দিয়েছে। সেখানে ভূমিকম্পের সময় ফায়ার সার্ভিসের দল গেছে। পরবর্তীতে ২০১৬-এর মাঝামাঝি বাংলাদেশ নেপালের খাদ্য সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করলে ১০ হাজার টন চাল পাঠায়। ভারত-সমর্থিত মদেশী আন্দোলনের সময়ও বাংলাদেশ নেপালকে সহায়তা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নেপালের ব্যবহারের জন্যে সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং মংলা সমুদ্রবন্দরও অফার করেছে বাংলাদেশ। নেপালের সাংকোশি নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে, যা কিনা ভারতের দয়াদাক্ষিন্যের উপরে নির্ভর করছে এখনও।



২০১৭-এর জুনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মরিশাস একটা ভোটের আয়োজন করে। যার মূল ছিল মরিশাসের আশেপাশের দ্বীপগুলি মরিশাসের অধীনেই থাকা উচিৎ ছিল কিনা। এই দ্বীপগুলি এখনও ব্রিটিশ উপনিবেশ। আর এর একটি দ্বীপ হলো দিয়েগো গার্সিয়া, যেখানে মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-৫২ বোমারু বিমানের ঘাঁটি রয়েছে। ৯৪টি দেশ মরিশাসের পক্ষে এবং ১৯টি দেশ বিপক্ষে (যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন সহ) ভোট দেয়। ৬৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে (চীন এবং রাশিয়া সহ)। বাংলাদেশ মরিশাসের পক্ষে ভোট দেয়। এই ভোটের ফলাফল খুব বেশি কিছু না হলেও এই ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশ মরিশাসের রাজনীতিতে প্রবেশ করলো। ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী মরিশাসে কর্মরত ৩৮ হাজার বিদেশী শ্রমিকের মাঝে সাড়ে ২১ হাজার এসেছে বাংলাদেশ থেকে, ২০১১ সালে যে সংখ্যাটা ছিল ১০ হাজারের মতো। মরিশাসের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতেই এরা কাজ করছে মূলতঃ। সাড়ে ১২ লাখ মানুষের ছোট্ট একটা দ্বীপ দেশের জন্যে সংখ্যাটা বেশ বড়। দ্বীপে ভারতের আধিপত্য থাকায় বাংলাদেশী শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বোঝাই যায় যে বাংলাদেশ এখনো দায়িত্ব নেবার সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেনি। জাতিসংঘে বাংলাদেশের মরিশাসের পক্ষে দাঁড়ানোটা বাংলাদেশের সামনে একটা নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের বুঝতে হবে যে মরিশাস এবং সেইশেল বাংলাদেশের সাথে আফ্রিকার যোগাযোগ পথের মাঝে অবস্থিত। আর যেহেতু সামনের দিনগুলিতে আফ্রিকা বাংলাদেশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, তাই মরিশাস এবং সেইশেলের গুরুত্বও বাংলাদেশের কাছে বাড়তে বাধ্য।

বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের একটা গ্রুপ ফটো। বাংলাদেশ তার বিশ্বমানের সামরিক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটগুলিকে এই অঞ্চলের দেশগুলির সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ব্যবহার করতে পারে।  
 

বাংলাদেশের সুযোগ কাজে লাগাতে হলে দায়িত্ব নিতে হবে



মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিয়েছে যে পিছনের সীটে বসে কূটনীতি হয় না। পিছনের সীটে বসলে কেউ পাত্তাও দেবে না; বরং যাচ্ছেতাই ব্যবহার করবে। অন্যদিকে দায়িত্ব নিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসার চেষ্টা বাংলাদেশকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সামনের দিনগুলিতে কিছু কূটনৈতিক পথ অনুসরণ করতে পারে, যা কিনা অদ্য অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে প্রভাবিত করবে। নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সেইশেল এবং মরিশাসের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।



১। বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা আরও সম্প্রসারিত করা।



২। যোগাযোগ বৃদ্ধি। অদ্য এলাকার দেশগুলির সাথে বাংলাদেশের বিমান, সড়ক এবং নৌযোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে দাপ্তরিক ঝামেলাগুলিকে কমাতে হবে।



৩। সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশের সামরিক প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলিতে এসব দেশের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রাধান্য দেয়া এবং তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সুসম্পর্ক তৈরি করা। উদাহরণস্বরূপ নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান লেঃ জেনারেল ইউসুফ বুরাতাই-এর কথা বলা যেতে পারে, যিনি বাংলাদেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। তাঁর সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্পর্ক কতটা গভীর, তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলালের নাইজেরিয়া সফরের সময় বেশ বোঝা গিয়েছিল।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এসল্ট রিভার ক্রসিং মহড়া। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর শুধুমাত্র নিজেরা মহড়া দিলেই হবে না। এই অঞ্চলের ছোট দেশগুলির সামরিক বাহিনীর সাথেও যৌথ মহড়ার আয়োজন করতে হবে। নেকড়ের ঝাঁকের মাঝে বসবাস করতে গেলে বিড়াল হয়ে থাকা যাবে না। নিজে বিড়াল হলে ভেড়ার পালকে নেকড়ের কাছেই ছেড়ে দিতে হবে। আর যদি বিড়াল হয়ে বেঁচে থাকার বাসনা পরিহার করতে হয়, তাহলে ভেড়ার পালের দায়িত্ব নিতে হবে।
  

৪। যৌথ মহড়ার আয়োজন। এসব দেশের সাথে নিয়মিত যৌথ সামরিক মহড়ার আয়োজন করতে হবে। নিয়মিত নৌবাহিনীর জাহাজ, বিমান বাহিনীর বিমান এবং স্পেশাল ফোর্সের সদস্যদের পাঠাতে হবে যৌথ প্রশিক্ষণের জন্যে। নেপালের সাথে মাউন্টেন ওয়ারফেয়ার ট্রেনিং, শ্রীলংকার সাথে জাঙ্গল ওয়ারফেয়ার ট্রেনিং, মালদ্বীপের সাথে এম্ফিবিয়াস ওয়ারফেয়ার ট্রেনিং করতে হবে। ভারত এতে কি মনে করলো, সেটা চিন্তা করে উচিৎ কাজ বাদ দেয়া যাবে না।



৫। নিরাপত্তা চিন্তার আমূল পরিবর্তন সাধন করা। এখন থেকেই চিন্তা করতে হবে যে নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের জাহাজ মালদ্বীপ-সেইশেল-মরিশাসে যেতে পারবে কিনা; বিমান বাহিনীর বিমান রিফুয়েলিং ছাড়া (বা শ্রীলংকায় রিফুয়েলিং করে) ঐ দ্বীপ দেশগুলিতে ল্যান্ড করতে পারবে কিনা। ঐসব দেশের ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝা এবং শেখার ব্যবস্থা করতে হবে। বিমান বাহিনীর কোন বিমান নেপালের দুর্গম এলাকায় ল্যান্ডিং করতে পারবে এবং সেই ল্যান্ডিং-এর জন্যে ট্রেনিং নেপালের কাছ থেকে পাওয়া যাবে কিনা; ইত্যাদি।



নেকড়ের ঝাঁকের মাঝে বসবাস করতে গেলে বিড়াল হয়ে থাকা যাবে না। নিজে বিড়াল হলে ভেড়ার পালকে নেকড়ের কাছেই ছেড়ে দিতে হবে। আর যদি বিড়াল হয়ে বেঁচে থাকার বাসনা পরিহার করতে হয়, তাহলে ভেড়ার পালের দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব নেবার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেই দায়িত্ব শুধু বাণিজ্য সম্প্রসারণের মাঝে রেখে দিলেই হবে না। কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্ববহ বিষয়গুলিতে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। ভেড়ার পালের নিরাপত্তা দিতে হবে; নিরাপত্তা দেবার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাখাইনের রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশকে দায়িত্ব নেবার এবং নিরাপত্তা দেবার শিক্ষাটাই দিয়েছে।


[১] 'পূর্ব আফ্রিকায় সমুদ্রপথ নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা', সাম্প্রতিক দেশকাল, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
[২] 'চীন-মিয়ানমার - পাইপলাইনের রাজনীতি', সাম্প্রতিক দেশকাল, ১২ নভেম্বর ২০১৫
[৩]  'চীনকে নিয়ন্ত্রণে ভারতকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র', সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৭ জুন ২০১৬
[৪] 'দক্ষিণ এশিয়ার রিলিফ ডিপ্লোম্যাসি', সাম্প্রতিক দেশকাল, ২৬ মে ২০১৬

10 comments:

  1. বাংলাদেশ আসলে যে স্ট্র্যাটিজিতে আগাচ্ছে তাতে হয়তোবা সুযোগ্য পর্যায়ে পৌছুতে বেশ দেরি হবে, কারন বর্তমান সময়ে দুই নৌকায় পা কন্সেপ্ট একদমই খাটে না, আদতে তা করলে পরে গিয়ে সিরিয়ার মত অবস্থা হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা আরো জটিল কারন বাংলাদেশ এর ভুরাজনৈতিক অবস্থান হয়ে গিয়েছে চরম গোলমেলে, কারন ধকলটা চলছে সেই জন্মের পর থেকেই। আভন্ত্যরিন সমস্যা তো আগে দূর করতে হবে যাতে পরবর্তিতে শক্ত হাতে সব মোকাবিলা করা যায়, ভারতের মত নড়বড়ে হয়ে তো আখেড়ে লাভ নাই। তবে পাশাপাশি পলিসি ও ঠিক করতে হবে যাতে সহজে ভবিষ্যতে তা কাজে লাগানো যায়, বলতে পারেন ফুল ফ্ল্যাজ প্ল্যান।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ কমেন্টের জন্যে।

      অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলতে যে কিছু নেই, সেটা ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের অধঃপতনই বলে দিচ্ছে। ভূরাজনীতিই নির্ধারণ করে একটা দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কি হবে। পরাশক্তির ইচ্ছেমত কোন কিছু না হবার পরিস্থিতি হলেই একটা দেশে অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দেবে - এটাই নিয়ম। কাজেই অভ্যন্তরীণ বিষয় ঠিক করে তাপরে বাইরে তাকাবেন - এই চিন্তায় বেশিদূর যাওয়া যাবে না।

      ভূরাজনীতি বোঝাটা বাংলাদেশের জন্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর ভূরাজনৈতিক এলাইনমেন্টগুলি সর্বদাই পরিবর্তিত হচ্ছে এখন; কারণ সুপারপাওয়ারের শক্তির অবক্ষয় ঘটেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশকে বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে ভূরাজনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে যে অস্থায়ী দুনিয়াতে স্থায়ী সম্পর্ক বলে কিছু নেই, যদি না সেটা চিরস্থায়ী কোনকিছুর সাথে সম্পর্কিত হয়।

      Delete
    2. আভ্যন্তরিন সমস্যা বলতে আমি বুঝিয়েছি একটা শক্ত ভিতের কথা যেটা দিয়া সামনে এগোতে হবে, কারন ভিত শক্ত না হলে পরে তা ভেঙ্গে পড়বে। বাংলাদেশ পরাশক্তি হোক বা না হোক ঐ ঢাকা থেকেই গুরুত্বপুর্ন কাজ করে যেতে হবে। অন্যদিকে মার্কিন, চীন আর ভারত যে পথ ধরে আধিপত্য করতে চাচ্ছে তা কিন্তু নজরে রাখতে হবে। এই যেমন মার্কিনিরা ১৫০ বছর যাবত যুদ্ধ করে যাচ্ছে, তবে ভিতরে নয়, বাহিরে, এর কারনই হল তাদের যে চিন্তা তা উক্ত দেশে লেলিয়ে দেয়ার নিমিত্তে। এজন্য তাহারা নিজেরা কান্ড ঘটিয়ে দোষ চাপায় টার্গেট করা দেশকে যাতে উহাতে তারা হাত দিতে পারে। এখন এর সুযোগে ভারত হাত মিলিয়েছে মার্কিনিদের সাথে যাতে ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। অন্যদিকে চীন বানিজ্য বৈ কিছু বুঝে না, তাহাদের বানিজ্যিক স্ট্রেটেজিতে আঘাত আসলে তারা পিছপা হবেনা, ব্যপারটা দাড়াল অনেকটা মধ্যযুগীয় ইউরোপের মত। আদতে ঐধরনের ইস্যু এর ক্ষেত্রে সবচে ভাল স্ট্যান্ডার্ড মনে করা যায় যে পরাশক্তিদের কামড়াকামড়ি থেকে আমরা কততুকু বেনিফিট আদায় করতে পেরেছি। ঐ পর্যায়ে যেতে বাংলাদেশকে আরো অপেক্ষা করতে হবে, ঐধরনের সুযোগ্য লোক লাগবে যারা শক্ত হাতে সব সামাল দিবে। ব্যাপারটা আরো দুখের কারন এদেশে লোক কাজ করে টাকা পাবে এজন্য, ইহা যে তার পেশা সেটা তারা চিন্তা করে না, করলে আরো ভাল হত। তবে শান্তিপুর্ন স্ট্রেটেজি নিয়ে আগালে এটাই একরকম রোল মডেল হয়ে থাকবে বিশ্বে। যেমন আফ্রিকাতে সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষার মিশনের পাশাপাশি সেখানে সমাজ গোড়ে তোলার কাজে ও সাহায্য করছে, ইহা একটা বেনিফিট বটে কারন ভবিষ্যতে সমস্যাতে পড়লে এরাই আমাদের ডাকবে আর বিপদের সময় এরাই সাহায্য করবে, কারন তাদের হাতে আর কোনো অপ্সহন থাকবেই না। আফ্রিকার অর্থনীতিতে বাংলাদেশের ভুমিকা অনেক। এ সুযোগ তো কাজে লাগাতে হবে। আর আমাদের পক্ষে তো সামরিক ঘাটি করা সম্ভব না, সবচে ভাল হয় আমাদের সশস্ত্র বাহিনি যদি তাদের প্রশিক্ষন দেয়, আমাদের দেশে তৈরী অস্ত্র রপ্তানী করে আর নিয়মিত তাদের সাথে সামরিক ও কুটনৈতিক যোগাযোগ রখে। তবে এসব করতে গেলে আবার বাধা আসবে পশ্চিম ব্লক থেকে, সেক্ষত্রে যদি এসকল দেশের সামাজিক ভিত গড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান থাকে তবে যখন বাধা আসবে তখন এরাই অগ্রজ হয়ে আমাদের সমর্থন দিবে, তাই আভ্যন্তরীন সমস্যা মেটানো সবচে গুরুত্বপুর্ন, কারন তারাও জানে এসব সমস্যার পিছনে ওয়েস্ট ব্লকের হাত আছে। এই জিনিসটা চীন করতে চায় বানিজ্য দিয়ে। একটা উদাহরন দেয়া যায় যখন বাংলাদেশ নৌবাহিনি যখন চীন হতে টাইপ ৫৩ (২) এর পুরোনো জাহাজ কিনে তখন চীন তা বিক্রি করে অতি কম দামে, কিন্তু পয়সা তারা ঠিকই উদ্ধার করেছে জাহাজের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে উচ্চ্যমুল্যে।
      আর পরাশক্তির হওয়ার আরেক শর্ত অবস্যি নিজেদের ইন্ডিজেনাস সামরিক শিল্প থাকতে হবে যা থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। টট এনে এতদিন তো বাংলাদেশ নিজদের কারখানায় অস্ত্র, জাহাজ, বানিয়েছে। এখন দরকার গবেষোনা করে নিজেদের এই শিল্পকে মজবুত করা। গবেষনার পাশাপাশি তার প্রয়োগ ও করতে হবে। জাপান ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় টিকে ছিল এই একটা জিনিসে ভর করে। তাহারা মাসে তিন চারটা বড়সড় জাহাজ বানিয়া ফেলার সক্ষমতা রাখতো। সেটা পুরানো কথা, পাশের মিয়ান্মার তাদের নিজের প্রযুক্তি দিয়ে ফ্রিগেট বানায়, মোবিলিটি এক্সেসরিস বানায়, বাংলাদেশের হিসাব করলে তা অনেক দূরে। কয়েকটা এসল্টা রাইফেল, গ্রেনেড, পিস্তল, এল পি সি, ট্রাক আর ওপিভি বানিয়া লাভ নাই। সমরাস্ত্র কারখানাকে আরো আধুনিক ও গেবেষনা উপোযোগী করতে হবে। নৌবাহিনির হাতে থাকা ড্রাইডকেও একই কাজ করতে হবে। আমরা এখনো বিমান শিল্পে হাতই দেই নাই, অন্তত ড্রোন আর ট্রেইনার বানাতে তো পারতাম এ মুহুরতে। এয়ার ডিফেন্স রাডার বানানোর মত মেধা থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনো প্রজেক্ট নেয়া হয়নি। বঙ্গপোসাগরের পানি ফিল্টার করে কিভাবে সারা দেশে সরবারহ করা যায় সেটা ও কেউ চিন্তা করেনা। ইমারজেন্সিতে কি পলিসি খাটবে তাও ঠিক নাই। এরপর আরো কত কি। একটা লঞ্চ খুজতা আর তা টেনে তুলতে ঘলদকর্ম অবস্তা।

      Delete
    3. রাষ্ট্রের লক্ষ্যই ঠিক করবে সেই রাষ্ট্র কি ধরনের শক্তি রাখবে। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের মাঝে থেকে রোহিঙ্গা সমস্যার যেমন সমাধান সম্ভব নয়, তেমনি সমুদ্রপথের নিরাপত্তাও দেয়া সম্ভব নয়; আবার রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করাও সম্ভব নয়। সংকীর্ণ চিন্তা থেকে রাষ্ট্রের সংজ্ঞাই দেয়া সম্ভব নয়, রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করা তো দূরে থাক।

      রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের লক্ষ্যে সম্পর্কিত বেশ অনেক আলোচনা এর আগের লেখাগুলিতে পাবেন। সময় করে পড়ে দেখতে পারেন।

      Delete
  2. মাইন পুঁতে রাখা সিমান্ত27 September 2017 at 12:47

    চমৎকার বিশ্লেষণ

    ReplyDelete
  3. দেশে যদি ভারতপন্থী সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাহলে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে মোকাবেলা করা যাবে কিভাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. যুক্তরাষ্ট্রপন্থী সরকার থাকলেই কি খুব ভালো কিছু হতো? তখন কি আমরা ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার জন্যে সৈন্য পাঠাতাম?

      যাই হোক, চীন থেকে আনা বাংলাদেশের সাবমেরিনগুলি দিল্লী কতটা সুখ-দৃষ্টিতে দেখেছিল সেটা অবশ্যই চিন্তা করার মতো। আর একইসাথে দু'টা ফ্রিগেট, দু'টা কর্ভেট, দু'টা এলপিসি-সহ অনেক কিছুই তো চীন থেকে এসেছে। এখন আবার ভারত-চীনকে মিয়ানমারের পক্ষে নামতে দেখে আসলেই জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে যে চীন থেকে অস্ত্র কেনাটা সম্ভবতঃ ভারত-প্রীতিরই নিদর্শন ছিল।

      রাখাইনের রোহিঙ্গা সমস্যাই বলে দিচ্ছে যে আন্তর্জাতিকভাবে অনেকের সাথেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা চলে, কিন্তু কৌশলগত সম্পর্ক সকলের সাথে চলে না।

      Delete
  4. ই দেশের কেউই আসলে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী একটা রাষ্ট্রকে দেখতে চাইছে না। এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্যে কতটা বিপদ বয়ে আনছে, সেটা তারা এখনো অনুধাবন করতে সক্ষম হননি।
    এখানে কোন বিপদের কথা বলা হয়েছে ??

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভূরাজনীতিতে একে অপরের শক্তি কর্তনের চেষ্টা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। নিজের চিন্তার সাথে অন্যের চিন্তার মিল না থাকলেই এধরনের কর্মকান্ড চালানো হয়। নিজের চিন্তা ব্যবহৃত হয় অন্যের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে। কাজেই নিজের চিন্তার বিরোধী যেকোন চিন্তা নিজের নিয়ন্ত্রণ, তথা নিজের স্বার্থ-বিরোধী।

      একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় নামাটা শক্তি কর্তনের যতটা না সহজ উপায়, তার চাইতে দুই পক্ষকে প্রতিযোগিতায় লাগিয়ে রাখাটা তার চাইতে আরও বেশি সহজ। তবে সেই উচ্চতায় নিজদের চিন্তাকে নিয়ে যাওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। ঐ উচ্চতায় যারা পৌঁছাতে পারে না, তারা না বুঝে অনেক কিছুই করে, যা কিনা পরবর্তীতে তাদের বিপদে ফেলে।

      Delete
  5. tar aage amader ke prothom samorik bebostha soktishali korte hobe.

    ReplyDelete